ষষ্ঠীতে দেবীর বোধন হলেও, তার আগে থেকেই প্রতিমা দর্শন করতে মানুষের ঢল নামে রাস্তায়। যে ভিড় চলে প্রায় দ্বাদশী অবধি। তাই পুজোর দিনগুলিতে শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় রাস্তায় নামছে ৮ হাজার পুলিশ।
যে কোনও ধরনের গোলমাল ও অপরাধ ঠেকানোই লক্ষ্য লালবাজারের। তাই নজরদারি ক্যামেরার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে বেহালায় ঠাকুর দেখতে আসা মানুষের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেজন্য ট্রাফিক বিভাগের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যাতে ভিড়ের চাপ সামলানো যায়।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে চতুর্থী থেকেই বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। একদিকে পুজোর শেষ পর্যায়ের কেনাকাটা, অন্যদিকে মানুষ ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়ায়, ট্রাফিকের সমস্যা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তাই গত কয়েক বছর ধরে চতুর্থীর দিন থেকেই রাস্তায় নামছে ফোর্স।
অন্যান্য বছরের মতো এবছরেও একই ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ওইদিন দুপুরের পর থেকে ভিড় সামলাতে বড় পুজোগুলিতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পঞ্চমীর দিন থেকে ছোট-বড় সব প্যান্ডেলেই পুরোমাত্রায় পুলিশি নজরদারি থাকবে।
বৃহস্পতিবার লালবাজারে অতিরিক্ত নগরপাল (সদরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম কমিশনার) সুপ্রতিম সরকার জানান, ৮ হাজার পুলিশ রাস্তায় নামানো হবে। তিন ভাগে তাঁদের ডিউটি দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ফোর্স থাকবে বিকেল সাড়ে তিনটে থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত প্যান্ডেলে দর্শনার্থী থাকছেন, ততক্ষণ এই ফোর্স রাস্তায় থাকবে।
রাত ১২টায় এর সঙ্গে আরও একটি ফোর্স যোগ দেবে। সেটি সকাল ৮টা পর্যন্ত রাস্তায় থাকবে। সকালের দিকে যাঁরা ঠাকুর দেখতে বের হন, তাঁরা যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়েন, সেই কারণে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বাড়তি পুলিশ রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি কোথাও আগুন লাগলে দমকল যাতে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে, সেজন্য পুলিশি এসকর্টেরও ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
লালবাজার সূত্রে জানা যাচ্ছে, এবার কলকাতায় বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা ২,৫০৯টি। পুজোর দিন কোথাও কোনও গোলমাল হলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেজন্য ৪০০টি পুলিশ পিকেট রাখা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। রাস্তায় টহল দেবে ২৪টি হেভি রেডিও ফ্লাইং স্কোয়াডের গাড়ি। বিভিন্ন বড় পুজো প্যান্ডেলে নজরদারি চালানোর জন্য বসানো হচ্ছে ৪৬টি ওয়াচ টাওয়ার। লাগানো হচ্ছে ৭৪টি সিসি ক্যামেরা। সর্বক্ষণ মনিটরিং চালাতেই এই ব্যবস্থা।
পুজো প্যান্ডেলে বা রাস্তায় মহিলাদের ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দর্শনার্থীদের সাহায্যের জন্য থাকছে সাতটি পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্স বুথ। রাখা হচ্ছে ২৭টি অ্যাম্বুলেন্স। যাতে কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া যায়। দশমীর পরেও বেশ কিছু পুজো প্যান্ডেলে ঠাকুর থাকবে। সেখানে মানুষ আসবে ধরে নিয়েই দ্বাদশী পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিসর্জনের জন্য ২৪টি ঘাটে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ (ডিএমজি) থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে।
লালবাজার থেকে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ৩২২ পাতার পুজো-নিরাপত্তা সংক্রান্ত পুস্তিকা। সেখানেই উল্লেখ রয়েছে, উৎসবের দিনগুলিতে মূলত দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দেওয়া বা ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ করাই পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, জরুরি পরিষেবা প্রদান বা ভিড়ের মধ্যে হওয়া অসামাজিক কার্যকলাপ দমনের মত কাজ তো আছেই।
বছর দু’য়েক আগে দেশপ্রিয় পার্কের পুজো পঞ্চমীর কলকাতাকে অচল করে দিয়েছিল। কল্পনাতীত থাকায় সেবার ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’-এর সুযোগই পায়নি পুলিশ। তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকে মেট্রোতে চেপেই ছুটতে হয়েছিল দেশপ্রিয় পার্কে। তারপর থেকেই শহরের হেভিওয়েট পুজোর তালিকায় ঢুকে পড়েছে এই পুজো। সেকথা মাথায় রেখেই এখন থেকে ঘুঁটি সাজাচ্ছে লালবাজার। দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকে মোট চারটি জোনে ভাগ করেছে লালবাজার। যার প্রতিটি জোনের দায়িত্বে থাকবেন একজন করে ডিসি পদমর্যাদার আইপিএস অফিসার। সবমিলিয়ে এবার পুজোয় আটঘাট বেঁধেই পথে নামছে পুলিশ।