এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই অশান্তির আঁচ পাওয়া গিয়েছিল আসামের সর্বত্র। ক্রমে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে আরও। সেই ধারা এখনও অব্যাহত। ফলে মাটি হয়ে গিয়েছে আসামের প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙালির পুজোর আনন্দ।
সকলেরই এখন একটাই চিন্তা, নিজেদের এবং পরিবার পরিজনের নাম উঠবে তো নাগরিকপঞ্জির তালিকাতে? নাকি বাপ-ঠাকুরদার ভিটে থেকে উৎখাত হয়ে ঠাঁই হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে! নিজভূমে পরবাসী হতে চলা আসামবাসীকে দিনরাত তাড়া করে বেড়াচ্ছে এই আতঙ্ক।
কথিত আছে, ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত মহিষাসুরের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সমস্ত দেবতারা তাঁদের নিজভূম স্বর্গ ছেড়ে পাতালে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তখনই তাঁরা আদ্যাশক্তি দেবী দুর্গার শরণাপন্ন হন। অতঃপর মা দুর্গা মহিষাসুর বধ করে দেবতাকুলকে রক্ষা করেন এবং দেবতারা তাঁদের পায়ের তলার মাটি ফিরে পান।
ঠিক একইভাবে আসামবাসীরাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এই অসুরসম এনআরসি এবং তা বাস্তবায়িত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতীক হাজেলাকে নিয়ে। তারই প্রতিফলন ঘটল এবারের পুজোয়। মহালয়ার পুণ্যপ্রাতে অসমের সবচেয়ে বাঙালি অধ্যুষিত শিলচরের বরাক উপত্যকায় দেখা গেল সকলে মা দুর্গার শরণাপন্ন হয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, মা এখানে ‘অসুরসম’ প্রতীক হাজেলাকে ত্রিশূল বিদ্ধ করে আসামকে এনআরসির কবল থেকে মুক্ত করছেন।
মহালয়ার দিন ‘দ্য নর্থ-ইস্ট লিঙ্গুইস্টিক অ্যান্ড এথনিক কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ বা এনইএলইসিসি মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ দেখায় গোটা সদরহাট এলাকায়। এনইএলইসিসি-র অন্যতম কর্ণধার তথা আইনজীবী শান্তনু নায়েক বলেন, ‘উনিই আমাদের জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছেন। আসামের প্রকৃত বাসিন্দাদেরই বহিরাগত বা অনুপ্রবেশকারী তকমা দেওয়া হচ্ছে এখন। সে কারণেই আমরা এইভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’