‘পুজো মানে সবাই মিলে একসঙ্গে থাকা-খাওয়া আর হইহুল্লোড়। আবেগ আর আবেশে সবার এক হয়ে যাওয়া’। এভারগ্রিনের পুজোমণ্ডপের উদ্বোধন করে এভাবেই আবেগাপ্লুত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন ফিরে গেলেন নিজের ছেলেবেলায়।
দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে ফাঁকে তাঁকে পাওয়া গেল অন্য রূপে। রাজনীতির কচাকচি দূরে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উঠলেন ঘরের মেয়ে। ঘুরে ঘুরে মণ্ডপ দেখলেন। শিল্পীদের কাছ থেকে জানলেন তাঁদের ভাবনার কথা। প্রশংসা করলেন তাঁদের কাজের। ত্রিধারার মণ্ডপে সঙ্গীতানুষ্ঠান শুনতে শুনতে গানের সঙ্গে গলা মেলালেন। আড্ডাও দিলেন। ফাল্গুনি সঙ্ঘের পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে ছবি আঁকলেন। কঠোর প্রশাসকের ভূমিকা সরিয়ে হয়ে উঠলেন ঘরোয়া। আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আশ্বাসও দিলেন আমজনতাকে। বললেন, ‘দুর্যোগকে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দু’দিন পরেই আবহাওয়া পরিষ্কার হয়ে যাবে’।
একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবের প্রতিমা দেখে মুগ্ধ মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘খুব সুন্দর হয়েছে’। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন তিনি। বলেন, ‘সুব্রতদার নেতৃত্বে রাজনীতি শুরু করেছি। তিনি ছিলেন আমাদের নেতা। এখনও তিনি আমাদের নেতা। খুব মন দিয়ে পুজো করেন। পুজোর চারদিন মণ্ডপেই থাকেন। সময় দেন। আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মধ্যেই তিনি আবদার করেন, আমাকে তাঁর আবদার রাখতে হয়’।
এখন থেকেই কলকাতার মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা। এত মানুষ দেখে অবাক হয়ে যান মমতা। প্রত্যেককে অভিনন্দন জানান তিনি। সেলিমপুর পল্লী, বাবুবাগান, মুদিয়ালি, সমাজসেবী, ত্রিধারা, শিবমন্দির, হিন্দুস্থান ক্লাব, বালিগঞ্জ কালচারাল, ভবানীপুর ৭৫ পল্লী, মুক্তদল মিলিয়ে মোট ১৬ টি পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন করেন মমতা। ঘুরে ঘুরে দেখেন শিল্পীদের কাজ। ভাবনা ও পরিকল্পনা দেখে তারিফ করেন তিনি। শিবমন্দিরের পুজো মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রী প্রবেশ করতেই চারদিক থেকে শুরু হয় শঙ্খধ্বনি। খুব খুশি হন মুখ্যমন্ত্রী। এখানকার থিম ‘মাটির টানে’। শিল্পীর ভাবনা ও কাজের প্রশংসা করে মমতা বলেন, ‘নিজের জায়গা ছেড়ে অনেকেই চলে যান। ফিরেও তাকান না’। তাঁদের আবার নিজের মাটি বাংলায় ফিরে আসার আহ্বান জানান মমতা। বলেন, ‘বিদেশে যারা পড়াশোনা করতে গেছেন, তাঁরা পড়াশোনা শেষ করে বাংলায় ফিরে আসুন’।
ত্রিধারা উদ্বোধন উপলক্ষ্যে হৈমন্তী শুক্লা ও রশিদ খানের সঙ্গীতের আয়োজন রেখেছিল। শিল্পীদের সঙ্গে গলা মেলান মুখ্যমন্ত্রীও। বলেন, ‘পুজোর সময় কত লোকের সঙ্গে দেখা হয়। খুব ভালো লাগে। পুজোমণ্ডপ যেন পাড়া হয়ে যায়’।