বলিউডের ‘চিরসুন্দরী’ নায়িকা একজনই আছেন। তিনি অভিনেত্রী রেখা। জীবন্ত এই কিংবদন্তী নায়িকার জন্মদিন আজ। তেষট্টি বছরে পা দিলেন তিনি। ইতিমধ্যেই টুইটার সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে সবাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তার মধ্যে যেমন বিশিষ্ট জনেরা আছেন। তেমন সাধারণ মানুষও আছেন। সবাই তাঁর গুণমুগ্ধ।
একটা সময় বলিউড দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এখনও বেছে বেছে একটা আধটা ছবিতে কাজ করেন। অভিনয় জগতে চুড়ান্ত সাফল্যের পাশাপাশি রেখার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও মানুষের কম আগ্রহ নেই। তাঁর জীবনের বহু-আলোচিত ঘটনাগুলো সম্পর্কে বারবার শুনেও মানুষের আশ মেটেনা। অনেকবার শোনা গল্প, বারবার শুনলেও একঘেয়েমিও আসেনা। তাঁর জীবনের বহুশ্রুত ঘটনাগুলো কেমন যেমন রহস্যেই মোড়া। ঠিক এই তেষট্টি বছর বয়সেও যৌবন ধরে রাখার রহস্যের মতো।এই অভিনেত্রীর ঘটনাবহুল জীবনের থেকেই কয়েকটা ঘটনা তুলে ধরলাম। সেগুলো নিয়ে একটা সময়ে বিতর্কের ঝড় বয়ে গেছে। অনেকে সমালোচনার মুখেও পড়েছেন তিনি।
রেখার পুরো নাম ভানুরেখা গণেশন। বাবা জেমিনি গণেশন পুরনো যুগের জনপ্রিয় তামিল অভিনেতা। মা তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাবলী। তবে এঁদের দুজনের কখনও বিয়ে হয়নি। একটা সময় পর্যন্ত জেমিনি রেখার পিতৃত্ব স্বীকার করেননি। এই নিয়ে বহু লেখালিখি হয়েছে। এই অভিনেত্রীকে নানা কুৎসাও রটেছে। তাঁর নিজের একজন বোন আছে। এছাড়া এক বৈমাত্রেয় ভাই ও পাঁচ বোন। রেখা কিন্তু কখনও অভিনয়ে আসতে চাননি। পরিবারের অর্থনৈতিক অনটন মেটাতেই তাঁকে এই পেশায় আসতে হয়েছে। বলিউডে ও দক্ষিনী ছবিতে সফল অভিনেত্রী হিসেবে নিজের জায়গা পাকা করার আগে, প্রথম দিকে তাঁকে কিছু বি ও সি গ্রেড তেলেগু সিনেমায় অভিনয়ও করতে হয়েছে।
রেখা যখন দক্ষিনী ছবির জগতে যথেষ্ট নাম করে ফেলেছেন, তখন কিন্তু বলিউডে তাঁর চেহারা নিয়ে বিদ্রূপের ঝড় উঠেছিলো। প্রথাগত ভাবে সুন্দরী যাকে বলে, তিনি তা ছিলেন না। গায়ের রঙও ছিলো কালো। উপরন্তু হিন্দীও জানতেন না ভালো করে। সব মিলিয়ে বলিউড ছবিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য তাঁকে বেশ বেগ পেটে হয়েছিলো। তবে ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী তিনি কোনও দিনই ছিলেন না। নিজেকে সময় দিলেন। নিজেকে বলিউডের উপযুক্ত করে গ্রুম করলেন। তারপর ‘দো অনজানে’ ছবি দিয়ে বলিউডে আবারও ফিরলেন। এরপর আর তাঁকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
বিভিন্ন সময়ে নানা অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর ঘটনা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। অভিনেত্রী হিসেবে বলিউডে যত সাফল্যের পথে এগিয়েছেন ততই তাঁর কো-স্টার দের সঙ্গে মুচমুচে প্রেমের গল্প নিয়ে নানা লেখালিখিও হয়েছে। সেই সময়ের অভিনেতা রাজ বব্বর, বিনোদ মেহরার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে যেমন কথা শোনা গেছে। তেমনই তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত ও অক্ষয় কুমারকে নিয়েও স্ক্যান্ডাল কম হয়নি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর অ্যাফেয়ার। প্রায় কিংবদন্তীর পর্যায়ে পৌঁছেছে বলা যায়। এখনও এই দুই তারকার সম্পর্কের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখে মিডিয়া। একই অনুষ্ঠানে তাঁদের দেখা গেলেও খবর হয়। রেখার স্বামী মারা যাওয়ার পরে, তিনি আর বিয়ে করেননি। তা সত্বেও সিঁথিতে সিঁদুর ও গলায় মঙ্গলসূত্র পড়ে তাঁকে বহুবার দেখা গেছে। এটা অমিতাভের প্রতি গভীর ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নয় বলেই অনেকে মনে করেন।
১৯৯০ সালে শিল্পপতি মুকেশ আগরওয়ালার সঙ্গে বিয়ে হয় রেখার। বিবাহিত জীবনেও সুখী হননি তিনি। এক বছরের মাথায় তাঁর স্বামী আত্মহত্যা করেন। রেখা সেই সময় আমেরিকায় ছিলেন। অমিতাভ ও রেখার গভীর প্রেমের সম্পর্কের কারণে নাকি মুকেশ অবসাদে ভুগছিলেন এমন কথাও ওঠে। যদিও মুকেশ তাঁর সুইসাইড নোটে আত্মহত্যার জন্য কাউকে দায়ী করে যাননি, তবুও এই ঘটনায় যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়েন অবিনেত্রী । বলিউডের অনেক সহ-অভিনেতা রেখার পাশ থেকে সরে দাঁড়ান। এই ঘটনার পরেই বান্দ্রার ফ্ল্যাটে একেবারে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন রেখা। বলিউডের কেরিয়ারে ভাঁটা পড়তে থাকে।
তবে সব ঝড় সামলে তিনি এখনও সেই লক্ষ হৃদয়ে ঝড় তোলা লাস্যময়ী নায়িকাই রয়ে গেছেন। সেই ইমেজে এখনও ভাঙন ধরাতে পারেনি কোনও ঘটনাই। কোনও কিছুতেই তাঁর কিছু যায় আসেনা।