বাঙালির পাত না হয় মাছ ছাড়া অসম্পূর্ণ। তাই বলে দেবতার ভোগেও মাছ! হ্যাঁ, অবাক হওয়ার কিছু নেই। পুরাণ বলছে, আমিষেও রুচি আছে দেব দেবীদের । তাই বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির কিংবা চিল্কিগড়ের দেবী কনকদুর্গার মন্দিরে দুর্গার পাতে পড়ে প্রমাণ সাইজের শোল ও মাগুর। রীতি মেনেই দেবীকে দেওয়া হয় মাছের ভোগ। তেমনটাই দাবি রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের।
তাই এ বার দুর্গাপুজোর বিভিন্ন মণ্ডপে নিজেদের স্টলে নিগমের তরফ থেকে বিক্রি করা হবে মা দুর্গার আমিষ ভোগ। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘দেবীর ভোগ’। নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৌম্যজিৎ দাস জানান, ভোগে থাকবে মোহন পোলাও, বেগুন ভাজা, শোল পোড়া, মাগুর মাছের টক ও পায়েস। পুজোর ভোগের মতোই মালসা ও শালপাতায় মুড়ে সেই দেবীর প্রসাদ মৎস্য উন্নয়ন নিগমের স্টল থেকে বিক্রি করা হবে। পঞ্চমী থেকে দেবীর ভোগ বিক্রি শুরু হবে।
তাঁর কথায়, ‘এখন মাগুর মাছের দাম প্রচুর। কিন্তু এক সময় মাগুর খাল-বিলে পাওয়া যেত। গরিব গ্রামের মানুষ দুর্গাকে বাড়ির মেয়ে বলে মনে করতেন। তাই সেই মাগুর মাছ দিয়েই তাঁরা দুর্গার ভোগ দিতেন। সেই থেকেই কনকদুর্গার মন্দিরে মাগুরের টকের চল।’ যেহেতু ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা তিনি, তাই আদিবাসী অধ্যুষিত চিল্কিগড়ের কনকদুর্গার মন্দিরে শোল পোড়ার ব্যবহারের কথা জানেন।
সৌম্যজিত বাবু বলেন, ‘ওই দু’টি মন্দিরের ইতিহাস বলছে মা দুর্গা আমিষ খান। হতেও তো পারে, এমন তথ্য সামনে আসার পরে অষ্টমীর দিনেও কেউ মাগুরের টক কিংবা শোল পোড়ার খোঁজে নিগমের স্টলে উঁকি দেবেন।’ তিনি জানান, এ বারে ওই প্যাকেজটি তৈরি করে নিগম আসলে থিম পুজোর সঙ্গে নিজেদেরও জুড়ে নিয়েছে। নিগম চাইছে, এ বার মা দুর্গার আমিষ ভোগ চেখে দেখুন দর্শকেরা।
জানা গেছে, শোল ও মাগুরের পদ ছাড়া অন্যান্য সুস্বাদু মাছের পদ নিয়ে প্রতি বছরের মত এবারও বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে হাজির হবে মৎস্য উন্নয়ন নিগম। আধিকারিকেরা জানান, পুজোকে সামনে রেখেই সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ থেকে প্রায় সাত লক্ষ বোরোলি মাছের চারা এনে নলবনে নিগমের জলাশয়ে ছাড়া হয়েছিল। সেই বোরোলি মাছের পদও পুজোর ক’টা দিন দর্শকদের সামনে হাজির করবে নিগম।
সোমবার মহালয়ার দিন থেকেই নলবন, নবান্ন, ইকো পার্কে নিগমের রেঁস্তোরাগুলিতে ৩৯৯ টাকায় ছ’টি মাছের বুফে চালু হয়েছে। পঞ্চমীর দিন থেকে ঘরে বসেই অনলাইনে নিগমের হরেক রকমের পদের খাবারের পদ হাতে পাবেন শহরবাসীরা। নিগমের ‘স্মার্ট ফিশ’ অ্যাপে ডাউনলোড করলে তিন রকম মাছের থালি সহজেই মিলবে। এমনকি ক্রেতাদের জন্য থাকছে নানারকম ছাড়ের ব্যবস্থা।
নিগম জানাচ্ছে, পঞ্চমীর দিন থেকে শহরের ২৩টি বড় পুজো মণ্ডপ চত্বরে নিগমের স্টল থাকছে। তাদের আশা, উৎসবের দিনগুলিতে ভালই বিক্রি হবে ‘দেবীর ভোগ’।