রাজ্যের সর্বত্রই এসেছে পরিবর্তন। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ও তার বাইরে নয়। সন্ত্রাস, আতঙ্কের ডেরা থেকে পর্যটন কেন্দ্র হয়ে ওঠা। এও এক উত্তরণ। মাওবাদীদের পায়ের শব্দে কেঁপে উঠত যে অযোধ্যা পাহাড়ের বুক, তা আজ হাতছানি দিচ্ছে পর্যটকদের। পরিবর্তনের এমন অনন্য নজির অন্য রাজ্যে দেখা যায় কিনা সন্দেহ আছে।
একসময় অযোধ্যায় ছিল মাওবাদীদের দাপাদাপি। ঝাড়খণ্ড টপকে এ রাজ্যে আস্তানা গড়ার চেষ্টা করত তারা। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে অবাধে চলত একের পর এক গ্রাম দখলের কাজ। বাধা দেওয়ায় বাঘবিন্দা গ্রামে এক রাতে খুন হয় সাতজন। পুলিশ অফিসার পার্থ বিশ্বাস, শিক্ষক সৌম্যজিৎ বসুও খুন হন। খুনের তালিকা যত লম্বা হল মানুষের মনে আতঙ্ক ততই চেপে বসল। সন্ধে নামলেই তখন ঘরের দরজায় পড়ত ছিটকানি। নিভে যেত আলো। সন্ধেতেই অযোধ্যা পাহাড়ে নেমে আসত রাতের নিস্তব্ধতা।
তবে সে অযোধ্যা আর নেই। বদলে গিয়েছে খোলনলচে। বর্তমান সরকারের প্রশাসনিক দৃঢ়তাই শান্তি নিয়ে আসে লালমাটির বুকে। জঙ্গলে ঘেরা যে পাহাড়ি গ্রামগুলি একসময় মাওবাদীদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় হয়ে উঠেছিল, এখন সেই গ্রামগুলিকেই মাওবাদীমুক্ত করে তৈরি হয়েছে যাতায়াতের রাস্তা। চলছে স্বাভাবিক জনজীবন। আর তারই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে উন্নয়ন।
আর এই শান্তির হাত ধরেই আসে উন্নয়ন। এখন পর্যটকদের ভিড় যত বাড়ছে, পাহাড়ের বুকে গড়ে উঠছে একের পর এক লজ। একইসঙ্গে সারানো হচ্ছে সরকারি বাংলো। এক সময় পাহাড়বাসীর জীবিকা বলতে ছিল জঙ্গলের শুকনো কাঠ বিক্রি, আর হাঁস, মুরগি, ছাগল পালন। এখন সেই অযোধ্যা পাহাড়েই প্রাধান্য পাচ্ছে পর্যটন ব্যবসা। হোটেল, লজের পাশাপাশি হচ্ছে অনেক দোকান। এখন প্রায় সারাবছরই থাকে পর্যটকদের আনাগোনা।