আর কটা মাত্র দিনের অপেক্ষা। আলোর রোশনাই-এ ঝলমলিয়ে উঠবে পুজোর বাংলা। ঢাকে কাঠি পড়বে। পুজো হবে মা দুর্গার। যদি বলি এই পুজোর বাইরেও একটা অন্য পুজো আছে। সেই পুজোতেও আর এক মায়ের পুজো হয়। তবে ঢাক বাজিয়ে, মন্ত্র পড়ে নয়। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষকে নতুন জামা কাপড় উপহার দিয়ে। হ্যাঁ। এমনই একটা অন্য পুজোর গল্প শুনে নিই। চলুন।
এই অন্য পুজোর পুরোহিত হলেন সুব্রত রায়। প্রতি বছর পুজোর সময় বহু মানুষকে জামা কাপড় কিনে দিয়ে তিনি দুর্গা পুজো উদযাপন করেন। শুরুটা কিভাবে হলো? তাঁর নিজের কথায় ‘১৯৮৬ সালে আমি প্রথম রোজকার করি। আমার মা বলেছিলেন, পাড়ার ৭ জন রিকশাওয়ালাকে পুজোর জামা কাপড় কিনে দিতে। সেই শুরু। তারপর থেকে আমি প্রতিবছরই পুজোর সময় বেশ কিছু মানুষকে জামা কাপড় কিনে দিই। তবে সাত জন থেকে সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে আট হাজার।’
সুব্রত বাবুর কথায় ‘ছোট বেলায় অভাব অনটন ছিলো। পুজোর সময়ে আমাদের চার ভাই বোনের একটা করেই নতুন জামা হতো’। তাঁর মা কল্যাণী রায় সব সময়েই তাঁকে ভালো মানুষ হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে এসেছেন। ‘অর্থকষ্টের মধ্যেও মা বরাবরই আমাদের অনুপ্রেরণা দিতেন ভালো করে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে’। মায়ের ইচ্ছেতেই তিনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট পাস করেন।
হিন্দু স্কুলের প্রাক্তনী, সুব্রত বাবুর ভাই বোনেরাও স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। চার ভাইবোন মিলে তৈরি করেছেন ‘কল্যাণী রায় মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’। এখন এই ট্রাস্টের মাধ্যমেই তিনি এই কাজ করে থাকেন। আট হাজার মানুষের জন্য জামা কাপড় কেনা মুখের কথা নয়। সহজ নয় সেগুলো তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়াও। তাই অক্টোবরের গোড়ার দিকেই শুরু করে দিয়েছেন তাঁর এই কর্মযজ্ঞ। ইতিমধ্যেই দোসরা অক্টোবর দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রায় সাতশো মানুষের মধ্যে পোশাক বিলিয়েছেন তিনি। গত সাত তারিখে উত্তর চব্বিশ পরগণার বাদুড়িয়াতে ৪০০ মানুষ জামা কাপড় পেয়েছেন। এভাবেই ষষ্ঠী পর্যন্ত চলবে। ষষ্ঠীর দিন নিজের বাড়ির কাছে তিনি প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষকে নতুন জামাকাপড় দেবেন।
কিভাবে ঠিক হয় কাকে জামাকাপড় দেওয়া হবে? ‘আমার বিভিন্ন ঘনিষ্ঠ বন্ধু বান্ধব আছেন। তাঁদেরকেই বলি লোক বেছে দেওয়ার জন্য সাহায্য করতে। প্রথমে কুপন দেওয়া হয়। তারপর ঠিক হয় কাকে দেওয়া হবে। সেই মতো সবাই একদিন এক ছাদের নীচে জড়ো হই’।
এছাড়াও সুব্রতবাবু আরও কয়েকটি সমাজসেবামূলক কাজ করেন। ঠাকুরপুকুরে তাঁর একটি অনাথ আশ্রম আছে। এছাড়াও বাদুড়িয়াতে আছে মেয়েদের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। তাঁর মায়ের নামে একটি স্কুলও রয়েছে। অভাবী ছাত্রদের বইপত্র, খাবার ইত্যাদি কিনে দিয়েও তিনি সাহায্য করেন।
পুজোর কটা দিন কিভাবে কাটান? ‘ঘুমিয়ে’। সংক্ষিপ্ত জবাব এলো। তারপরে বললেন ‘আসলে যখন দেখি, নতুন জামা কাপড় পেয়ে বাচ্চাদের হাসি মুখ – সেই খুশি মুখ দেখেই আমার মন ভরে যায়। তাতেই আমার পুজোর আনন্দ। ওটাই আমার পুজো। এখান থেকেই বছরভর লড়াই করার শক্তি পাই।’