ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার দিন শেষ। ব্যারিকেড দিয়ে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করতে হবে মন্দিরের ভিতর। এ কথা আগেই জানানো হয়েছিল শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তরফে। এবার থেকে পুরীর মন্দিরে জগন্নাথদেব দর্শনের জন্য বাইরে থেকে আসা ভক্তদের সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতে হবে। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়তে পারবেন না কেউই। তবে পুরীর স্থানীয় ভক্তদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম লাগু হচ্ছে না। জানাল পুরীর জেলা প্রশাসন।
পুরীর মন্দিরের ভিড় সামলানো দায়। জগন্নাথদেব দর্শনের জন্য ভক্তদের ধাক্কাধাক্কি, হট্টগোল রোজকার ব্যাপার। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সারিবদ্ধভাবে ভক্তদের মন্দিরে প্রবেশ এবং বেরিয়ে আসার বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশে ক্ষুব্ধ সেখানকার স্থানীয় ভক্ত এবং সেবায়েতরা। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে আপত্তি জানায় ‘শ্রী জগন্নাথ সেনা’ নামের স্থানীয় সংগঠন। নিয়ম পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবিতে ১২ ঘণ্টা বনধের ডাক দেয় ওই সংগঠন।
বুধবার বনধের মধ্যেই অশান্তি ছড়ায় সেখানে। উন্মত্ত জনতা মন্দিরের কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। ভাঙচুর চালায়। থানা এবং এসপি-র বাড়িতেও পাথর ছোঁড়ে হট্টগোলকারীরা। গাড়ি তছনছ করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ বাধে ওই সংগঠনের সদস্যদের। ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ১০ জন পুলিশ। রাজস্বমন্ত্রী মহেশ্বর মোহান্তির বাড়ি পুরীতে। সেখানেও তাণ্ডব চালায় ক্ষিপ্ত জনতা। মন্দির পরিদর্শন করে ডিজিপি আর পি শর্মা বলেন, ‘সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মন্দিরের।’ সেখানকার লোকজনের কাছে শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানান তিনি।
বুধবারের ঘটনা সম্পর্কে শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান প্রশাসক পি কে মহাপাত্র বলেন, ‘বুধবারের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। সৈকত শহরের দুর্নাম হল।’ আদালত নির্ধারিত আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম গত মাসে পুরী ঘুরে গেছেন। বুধবারের ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শুনিয়েছেন তিনি। তবে বুধবারের পর থেকে এখনও অব্দি পরিস্থিতি শান্তই আছে। স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে পুরী।
এদিকে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের নিয়ে শান্তি বৈঠক করেন জেলা কালেক্টর জ্যোতিপ্রকাশ দাস। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় মন্দিরে আসেন স্থানীয় ভক্তরা। তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁরা পুরীর বাসিন্দা। সেই পরিচয়পত্র দেখিয়ে তিনটি দরজা দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন তাঁরা। ওই তিনটি মূলত বাইরে যাওয়ার দরজা। বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীরা সিংহদুয়ার দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করবেন। এখানে আদালতের নিয়মের কোনও নড়চড় হবে না।’
শ্রীক্ষেত্র স্বাভিমান মঞ্চের আহ্বায়ক দেবাশিস দাসের কথায়, ‘শতাব্দীপ্রাচীন মন্দিরের রীতিনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যায় না। সংস্কারকে স্বাগত। কিন্তু ভক্তদের স্বার্থের বিনিময়ে নয়। জগন্নাথ মন্দিরের ঐতিহ্য দেশের অন্য মন্দিরের থেকে আলাদা। সর্বোচ্চ আদালত ঝামেলাহীন দেব দর্শনে জোর দিয়েছে। তার জন্য সার বেঁধে দাঁড়ানো নিয়ম হতে পারে না। দেব দর্শনের জন্য ভক্তদের অপেক্ষা করতে হবে কেন?’
ভুবনেশ্বরের সমাজকর্মী শরৎচন্দ্র মোহান্তির কথায়, ‘এক-একজন ভক্তের জন্য এক-একরকম নিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব বিস্ময়কর। পুরীর ভক্তদের লাইনে দাঁড়াতে হবে না। আমরা এই নিয়ম সমর্থন করি না। আমরাও ভক্ত। কেন কষ্ট ভোগ করব?’