পিতৃপক্ষের শেষ হয় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ দিয়ে। আর মহালয়া দিয়েই শুরু দেবীপক্ষের। মহালয়ার ভোর মানেই উমার আলোর বেণু শুনে নস্ট্যালজিয়ার খাতা খুলে ফেলা। এ দিন বাঙালি রেডিওতে যেমন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পাঠ শুনবেই, তেমনই টেলিভিশনের পর্দায় দুর্গার অসুরদমনও দেখবে। কার্যত রেডিওতে মহিষাসুরমর্দিনী শোনার পরই টিভি খুলে ‘মহালয়া’ দেখতে বসে যায় গোটা পরিবার।
প্রতিবছরই বিভিন্ন চ্যানেল নিজের মতো করে এই মহালয়ার অনুষ্ঠান সাজিয়ে নেয়। সাধারণত কোন চ্যানেলে কে দুর্গা হচ্ছেন, তা নিয়ে আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় বিস্তর জল্পনা। এবং প্রতিবছরই নানা জনপ্রিয় মুখেদের দেখা যায় দুর্গার ভূমিকায় অভিনয় করতে। ২০১৮-ও ব্যতিক্রম নয়। প্রতি বছরের মতো এই বছরও বাংলা বিনোদন চ্যানেলগুলি প্রস্তুত তাদের ‘মহালয়া’ স্পেশাল অনুষ্ঠান নিয়ে।
এ’বছর একটি চ্যানেল ‘দুর্গতিনাশিনী দুর্গা’ পরিবেশন করছে। যেখানে দুর্গার ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে অভিনেত্রী এবং নৃত্যশিল্পী শ্রীনন্দা শঙ্করককে। প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট চ্যানেলটি গত তিন বছর ধরেই অন্যরকম ভাবে মহিষাসুরমর্দিনী পরিবেশন করে আসছে। ‘অকালবোধন’, ‘অভয়ামঙ্গল’, ‘জগৎজননী দুর্গা’-র পর এ’বার ‘দুর্গতিনাশিনী দুর্গা’।
দেবীর চণ্ডী অবতারের উপরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবার। চণ্ডিকা, চামুণ্ডা, মহালক্ষ্মী, মহামায়ার অবতারে দেখা যাবে চ্যানেলের বিভিন্ন ধারাবাহিকের অভিনেত্রীদের। বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যাবে নেহা অমনদীপ, তৃণা সাহা, স্বস্তিকা দত্ত, রুষা চট্টোপাধ্যায়দের। এ ছাড়াও মনামী ঘোষের একটি নাচের পারফরম্যান্স দেখা যাবে। বিশেষ ভূমিকায় থাকবেন শ্রীতমাও। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালিত ‘দুর্গতিনাশিনী দুর্গা’য় কোরিওগ্রাফির দায়িত্বে রয়েছেন সুদর্শন চক্রবর্তী।
অন্য একটি চ্যানেল আবার বাংলার লোকসংস্কৃতির সঙ্গে মহিষাসুরমর্দিনীকে মিলিয়েছে। সেখানে দুর্গা কখনও সুন্দরবনের বনদেবী, কখনও বা পুরুলিয়ার মিষ্টি একটি মেয়ে। একইসঙ্গে দেবীর ভয়াল রূপও আছে। লোকনাথের চোখ দিয়ে দুর্গার নানা রূপ এবং অসুরদমন বর্ণনা করা হবে এখানে। বিভিন্ন ধারাবাহিকের প্রথম সারির অভিনেত্রীরা এক একটি ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। প্রমিতা চক্রবর্তী, ঊষসী রায়, দিয়া মুখোপাধ্যায়, শ্রেয়সী রায়, তিয়াষা রায়কে দেখা যাবে বিভিন্ন চরিত্রে। পার্বতী ও মহিষাসুরমর্দিনী করছেন দিতিপ্রিয়া রায়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট চ্যানেলটি বাচ্চাদের জন্য অ্যানিমেটেড মহালয়াও দেখাবে।
আর এক চ্যানেলের ‘জয়ং দেহি’ অনুষ্ঠানটি দুর্গা ও অসুরের পরিচিত লড়াই দিয়ে শুরু হবে না। এখানে অনুষ্ঠান শুরু হবে মনসা ও চণ্ডীকে দিয়ে। চণ্ডী মনসাকে তাঁর ছেলের কুকর্ম সম্পর্কে সাবধান করেন এবং মনসার সব শক্তি কেড়ে নেন। মনসা ব্রহ্মার সহায় হলে তিনি মনসাকে বলেন, কী ভাবে রাজা সুরথ শক্তির আরাধনা করে শত্রুকে দমন করেছিলেন। মনসা চণ্ডীর আরাধনা করেন এবং চণ্ডী বর্ণনা করেন তাঁর শক্তিরূপ। এখানে চাঁদনী সাহা মনসার চরিত্রে এবং অদিতি চট্টোপাধ্যায় চণ্ডীর চরিত্রে অভিনয় করবেন। তাঁরা দুজনেই চ্যানেলের ‘মনসা’ ধারাবাহিকে, এই দুটি চরিত্রেই অভিনয় করেন।
তবে মহালয়ার টেলি-অনুষ্ঠানগুলি যতটা মা দুর্গার, ততটাই কিন্তু মহিষাসুরেরও। কারণ মহিষাসুর বধ না হলে তো আর দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী হবেন না। সাধারণত প্রতিটি চ্যানেলের বিভিন্ন ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে যাঁরা থাকেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই বেছে নেওয়া হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-কে। কিন্তু অসুরদের কাস্টিং কিন্তু সব সময় সেভাবে হয় না।
একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে যেমন মহিষাসুর হিসেবে দেখা যাবে অভিনেতা নাইজেল আক্কারাকে। আরেকটি চ্যানেলে মহিষাসুর হিসেবে দর্শক দেখবেন নৃত্যশিল্পী ও নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্র মিশ্রকে। এর আগেও অন্য একটি চ্যানেলের মহালয়া অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আবার অন্য একটি চ্যানেলে মহিষাসুরের ভূমিকায় দেখা যাবে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধারাবাহিকে অভিনয় করা সম্রাট মুখোপাধ্যায়কে। অর্থাৎ দুর্গা-ব্রিগেডকে জোরকদমে টক্কর দিতে তৈরী মহিষাসুর-ব্রিগেড।