থিম শব্দটার সঙ্গে দুর্গাপুজো এখন ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গেছে। তবে থিম পুজোর ব্যাপারে যখন কেউ কিচ্ছু জানতো না, এই ধরুন ১৯৩৬ সালের কথা বলছি-তখন থেকেই শহরের একটি সার্বজনীন পুজোয় কিন্তু থিমের প্রচলন শুরু হয়ে গিয়েছে। উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জী পার্কের কথা বলছি। ১৯৩৬ সালে এই সার্বজনীন দুর্গোৎসবটির সূচনা হয়। ওই সময় থেকেই এই পুজোর মণ্ডপ সজ্জার মাধ্যমে কোনও না কোনও ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে। সেই ভাবনায় কখনও উঠে এসেছে সদ্য দেশ স্বাধীন হওয়ার আনন্দ, আবার কখনও উত্তাল সত্তরের দশক।
এই বছর এই সার্বজনীন পুজো ৮২ বছরে পা দিলো। উত্তরের এই জনপ্রিয় পুজোর প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জা দেখার জন্য প্রতিবছরই লাখো মানুষের সমাগম হয়। কথায় কথায় পুজোর কর্মকর্তাদের একজন জানালেন ‘আমরা প্রতি বছরই আমাদের পুজো মণ্ডপে নতুন কিছু উপস্থাপনা করার চেষ্টা করি। আর সেই কারণেই আমাদের পুজোমণ্ডপ দেখতে লোকে ভিড় করেন’। ঠাকুর বিসর্জন হয়ে যাওয়ার পরও মানুষ শুধু মণ্ডপ দেখার জন্য এসেছেন – এমন অভিজ্ঞতাও তাঁদের রয়েছে বলে জানিয়েছেন।অভিনব থিমের জন্য এই পুজো বহুবার নানা সেরা পুজোর তকমাও পেয়েছে।
আবারও একবার থিমের প্রসঙ্গে ফিরে আসি। প্রতি বছরের মতো এবারও এই পুজোর মণ্ডপসজ্জায় উঠে আসবে একটা নতুন ভাবনা। এইবারের থিম হলো ‘টাইম মেশিন’। শিল্পী সুবল পালের ভাবনায় সমগ্র মণ্ডপটি ধীরে ধীরে একটি টাইম মেশিনের রূপ পাচ্ছে। এই নিয়ে তিন বছর তিনি এই পুজোর থিম-মন্ডপসজ্জার দায়িত্বে। গত বছর এই পুজোর থিম ছিলো ‘জলছবি’। তার আগের বছর ‘ডাউন বনগাঁ লোকাল’। দুটোই মণ্ডপ দেখতে আসা দর্শকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিলো।
পুজোর আর মাত্র কয়েকটা দিন। তৃতীয়ার দিন পুজোর উদ্বোধন হওয়ার কথা। ফলে শিল্পী থেকে কর্মকর্তা সবার নাওয়া খাওয়া মাথায় উঠেছে। পুরোদমে মণ্ডপসজ্জার প্রস্তুতি চলছে। তারই ফাঁকে শিল্পীকে জিগ্যেস করলাম ‘টাইম মেশিনে আমরা কতদুর পিছিয়ে যাচ্ছি?’ শিল্পী সুবল পালের সংক্ষিপ্ত উত্তর ‘সেটাই তো মজার ব্যাপার। এই টাইম মেশিনে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। পিছিয়ে যাচ্ছিনা’। সেটা কেমন ব্যাপার? এর জন্য পরবর্তী লেখায় চোখ থাকুক।