ফাঁস হয়ে গেল চিটফাণ্ড কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে প্রভাব খাটাতে চেয়ে দুই শীর্ষ বিজেপি নেতার কথোপকথনের অডিও ক্লিপ। কয়েক মিনিটের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় সেটি। একটি টেলিফোন সংলাপের ওই অডিও ক্লিপে একজনের কণ্ঠস্বর বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা বাংলায় দলের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়র সঙ্গে আপাত ভাবে মিলে যায়। অন্য জনের গলা শুনে মনে হয়, সেটি মুকুল রায়ের। ‘এখন খবর’ এই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই না করলেও একটি সর্বভারতীয় সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী মুকুল রায় মেনে নিয়েছেন, এটি তাঁর সঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ফোনালাপ।
মিনিট সাতেকের ওই অডিও ক্লিপ শুনে বোঝা যায় ফোন করেছিলেন কৈলাস। মুকুলকে তিনি ‘দাদা’ বলে সম্বোধন করেছেন। কী আছে ওই অডিও ক্লিপে? চিটফাণ্ড কাণ্ডে প্রভাব খাটাতে চেয়ে সিবিআই অফিসারদের দিয়ে রাজ্যের চার আইপিএস অফিসারকে ‘ভয়’ দেখাতে চেয়েছেন মুকুল। পাশাপাশি, তৃণমূলের এক সাংসদকে ভাঙানোর চেষ্টা নিয়েও আলাপ-আলোচনা করেন দুজনে। সামনে লোকসভা ভোটে বাংলায় আসন বাড়াতে চায় বিজেপি। তাই কীভাবে মতুয়া সম্প্রদায়কে ‘হাতে’ আনা যাবে সেই নিয়েও নিজেদের মধ্যে খোলাখুলি কথা বলেছেন বিজেপি-র দুই শীর্ষ নেতা।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, দেশে ‘সুপার ইমার্জেন্সি’ চলছে। এজেন্সি দিয়ে বিজেপি ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ ছিল তাঁর। ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে উঠে এল মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের সত্যতা। কথোপকথনের এক পর্যায়ে কৈলাস জানতে চান, ‘অধ্যক্ষজির (অমিত শাহ) কাছে যাচ্ছি। কী কী বলতে হবে?’ ভাঙা হিন্দিতে মুকুল বলেন, ‘চার আইপিএস কো সিবিআই থোড়া নজর ডালনা হোগা। কোই ধ্যান দেঙ্গে তো আইপিএস ডর যায়েঙ্গে’। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, সিবিআই দিয়ে রাজ্যের পুলিশকে কড়কে দেওয়ার চেষ্টা। আয়করের ডিরেক্টর অব ইনভেস্টিগেশন ও অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর পদে নিজের পছন্দের অফিসার নিয়োগেরও প্রস্তাব দিয়েছেন মুকুল। কৈলাসও আশ্বস্ত করে দুই পদের দু’টি প্রস্তাবিত নাম ও এখন তাঁরা কোন পদে আছেন, তা জানিয়ে এসএমএস পাঠাতে বলেন। তখন সঞ্জয় সিংহ নামে একজনের নাম উল্লেখ করেন মুকুল।
অবশ্য দলীয় তরফে এই অডিও টেপ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি তৃণমূল। তবে দলের এক মুখপাত্র বলেন, সিবিআই-কে বিজেপি যে রাজনৈতিক ভাবে অপব্যবহার করছে তা অনেক দিন ধরেই দলনেত্রী বলছেন। সেটাই হাতেনাতে প্রমাণ হয়ে গেল।
ফোনালাপ শুরু হয় মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে কীভাবে নিজেদের প্রভাব বাড়ানো যায় সেই নিয়ে। আগাগোড়া ভাঙা হিন্দিতে কথা চালিয়ে যান মুকুল। কৈলাসকে বলেন, মমতা ঠাকুরকে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছি। ওই পরিবারেরই শান্তনু ঠাকুরকে ও সুব্রত ঠাকুর সম্পর্কেও দু’জনের কথা হয়। কৈলাস জানান, শান্তনু তাঁর সঙ্গে দেখা করে বিজেপিতে কাজ করতে চেয়েছেন। কৈলাসের কথায়, ‘ও একটা গাড়ি চাইছে। ঘুরে ঘুরে সম্মেলন করতে চাইছে। আমার ছেলেটিকে খুব স্পার্কিং লেগেছে’। শুনে মুকুল বলেন, তাঁকে দলে নিলে ভালই হবে। শান্তনুর কথা বলার পরেই মুকুল কৈলাসকে বলেন, শঙ্কর ঠাকুরের প্রভাব মতুয়া সমাজে অনেক বেশি। শঙ্করকে তিনি কৈলাসের সঙ্গে দেখা করিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। মুকুলের কথায়, ‘মঞ্জুলকৃষ্ণের স্ত্রী শঙ্করের মা। তিনিও স্পার্কিং লেডি। ফাইটিং লেডি।‘
এই ফোনালাপ ফাঁস হতেই ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মুকুলের গায়ে ‘সুবিধাবাদী’ তকমাও লাগান অনেকে। তবে এর মধ্যে কোনও দোষ দেখছেন না মুকুল। বলেন, ‘ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে। আদালতে যাব’। তাঁর সুরেই গলা মিলিয়েছেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি সব দোষ চাপিয়েছেন তৃণমূলের ঘাড়েই। যদিও এতে অন্য চক্রান্ত দেখছে তৃণমূল। দলের এক নেতার কথায়, ‘কে এই টেলিফোন-সংলাপ ফাঁস করল, তা বিজেপি এ বার তদন্ত করে দেখুক’।
সব মিলিয়ে এই ফোনালাপকে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। বিরোধীদের বড় অভিযোগ ছিল, সিবিআই দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি। বিশেষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার অভিযোগ করেছিলেন, প্রতিবাদ করলেই এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে। বিজেপির দুই শীর্ষ নেতার ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপ মমতা ও বিরোধীদের সেই অভিযোগকেই সত্য প্রমাণ করে দিল। বাংলা বিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে তাও প্রমাণ হয়ে গেল। বেআব্রু হয়ে গেলেন মুকুল-কৈলাস।
https://www.facebook.com/ekhonkhobor18/videos/305862733538336/?t=9