‘পরিকল্পিত চক্রান্ত। এর পেছনে বিজেপি-আরএসএসের সরাসরি যোগ আছে।’ নাগেরবাজার বিস্ফোরণকাণ্ডে এভাবেই গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সাফ জানিয়ে দিলেন, ‘ব্যাগে বোমা রেখে চলে গিয়েছিল, পুলিস কীভাবে বুঝবে।’ রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুও খাদ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘আরএসএস-বিজেপি এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা পাকা হাতের কাজ।’ অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের কথায়, নিজেদের দোষ ঢাকতে বিজেপিকে নিশানা করছে শাসক দল।
আজ মঙ্গলবার ছুটির দিন সকালে দক্ষিণ নাগেরবাজারে যশোহর রোডের উপর একটি মিষ্টির দোকানের পাশেই একটি গুদামের সামনে হঠাৎই প্রবল বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, গোটা এলাকা কেঁপে ওঠে। ভেঙে তুবড়ে উড়ে যায় ওই গুদামের শাটার। যে পাঁচতলা বাড়ির নীচে ওই মিষ্টির দোকান, সেই বহুতলের কাচের জিনিসপত্র ঝনঝন করে ভেঙে পড়ে। রাস্তার উল্টো দিকের বহুতলেরও একটি শাটারও ভেঙে তুবড়ে যায়। আহত হন ১২ জন। পরে এসএসকেএম-এ আহতদের মধ্যে মৃত্যু হয় বিভাস ঘোষ নামে ৮ বছরের এক বালকের।
প্রসঙ্গত, যে বহুতলের নীচে ফলের দোকানে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই বহুতলেই রয়েছে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। এখানেই বসেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার পুরপ্রধান পাচু রায়। প্রতিদিন সকাল ১০টা নাগাদ অফিসে আসেন তিনি। এ দিন ঘটনার সময় তিনি কার্যালয়ে ছিলেন না। পুরপ্রধানের দাবি, ওই বিস্ফোরণের লক্ষ্য ছিলেন তিনিই। তাঁর কথায়, ‘পরিকল্পিত ভাবে বোমা রাখা হয়েছিল। টার্গেট ছিলাম আমিই।’
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি সরাসরি তোপ দাগেন বিজেপি এবং আরএসএসের দিকে। বলেন, ‘এলাকার ছেলেদের থেকে যা খবর পেয়েছি তাতে এটা স্পষ্ট যে এর পিছনে বিজেপি এবং আরএসএসের হাত রয়েছে। গোটা রাজ্য জুড়ে হিংসা ছড়াচ্ছে এরা। আমাদের ছেলেরা রাজনৈতিক ভাবে এর প্রতিবাদ করবে। সিআইডি তদন্ত করছে। সব বেড়িয়ে আসবে।’ বালুবাবুর মন্তব্যে সমর্থন জানান মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। বলেন, ‘এই এলাকায় প্রতিদিনই আসেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার পুরপ্রধান পাচু রায়। সঙ্গে থাকেন আরও বেশ কিছু দলীয় কর্মী।’ মন্ত্রীর অনুমান সব জেনেশুনে পরিকল্পনা করেই পাচু রায়কে টার্গেট করেছিল দুষ্কৃতীরা।
তদন্তে নেমে কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও বিস্ফোরকের প্রকৃতি নিয়ে প্রথমে নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিস। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিস কমিশনার জানান, শক্তিশালী সকেট বোমা ফেটেই বিস্ফোরণ হয়েছে নাগেরবাজারে। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে সিআইডি। নিয়ে আসা হচ্ছে স্নিফারডগ, বম্ব স্কোয়াড এবং ফরেনসিক দল।