মূলধারার হিন্দি সিনেমায় একটু ব্যতিক্রমী অভিনেতা হিসেবে মনোজ বাজপেয়ী বেশ জনপ্রিয়। অভিনয়ের জোরেই দর্শকদের হৃদয়ে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
১৯৬৯ সালে বিহারের বেলোয়া গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারে তার জন্ম। বাবা অভিনেতা মানোজ কুমারের ফ্যান ছিলেন, আর তাই ছেলের নাম রাখেন মনোজ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। স্কুলে পড়াকালীন একবার গ্রামে যাত্রাদলের অভিনয় দেখেই তাঁর মনে অভিনেতা হবার ইচ্ছা জাগে। হাই স্কুলে পড়ার সময় স্কুলে একটি মঞ্চ নাটকে সিলেকশন হলেও জামা ময়লা বলে তাঁকে স্টেজে উঠতে দেওয়া হয়নি। তবে কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি কলেজের বিভিন্ন মঞ্চ নাটকে অংশ নিতেন।এলাকায় মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে বেশ নামও করেন তিনি।
আইএ পাশ করার পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে নাটকের প্রতি আকর্ষণ আরো বাড়ে।একবার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছবির প্রচারে এসেছিলেন অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর একটি সিনেমার চরিত্রের অনুকরণ করে দেখান মনোজ, যা মুগ্ধ করে নাসিরুদ্দিন শাহকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই ভারতের বিখ্যাত অভিনয় প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন তিনি। কিন্তু প্রথমবার লিখিত পরীক্ষাতেই অনুত্তীর্ণ হন। এভাবে চারবার ব্যর্থ হবার পর প্রচন্ড হতাশায় ডুবে যান, এমনকি আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন।তবে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে অভিনেতা রঘুবীর যাদব তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান।
রঘুবীরের পরামর্শে মানোজ বিখ্যাত ব্রিটিশ মঞ্চ পরিচালক ব্যারি জনের কর্মশালায় অংশ নেন। জন তাঁর থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপ থেকে বাগদাদের গোলাম নামে একটি নাটক মঞ্চায়িত করতে চেয়ছিলেন। রঘুবীরকে মুখ্য চরিত্রের জন্য রাখা হলেও বাকি চরিত্রদের কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকেই বাছাই করে নেওয়া হয়। সেখানে মনোজের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে জন তাঁকে রহমতউল্লাহ চরিত্রের জন্য নির্বাচিত করেন এবং ১,২০০ টাকা পারশ্রমিকের বিনিময়ে তাঁকে তাঁর দলে নিয়ে নেন।
বছর দুয়েক তিনি ব্যারি জনের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এরপর পঞ্চমবারের মতো ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামাতে আবেদন করলে তাঁকে সরাসরি ফ্যাকাল্টি শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
ব্যারি জনের থিয়েটার অ্যাকশন গ্রুপে যুক্ত হবার সময় থেকে শাহরুখ খানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে মনোজের। দীর্ঘ সময় একসাথে মঞ্চে কাজ করেছেন দুজনে। শাহরুখ মনে করেন, মনোজ এ সময়ের একজন সেরা অভিনেতা। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
১৯৯৪ সালে গোবিন্দ নিহালনির দ্রোহকাল সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় পা রাখেন মনোজ। একই বছর শেখর কাপুরের ব্যান্ডিট কুইন ছবিতে মান সিং চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পান। তবে ১৯৯৭ সালে রাম গোপাল ভার্মার সত্য ছবিতে ভিখু মাথরের চরিত্রে অভিনয় তাঁকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
তাঁর সেরা ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে রাকেশ ওম প্রকাশের আক্স, প্রকাশ ঝা পরিচালিত রাজনীতি, অনুরাগ কাশ্যপ পরিচালিত গ্যাংস অব ওয়াসেপুর এবং হংসল মেহতার আলিগড়। গ্যাংস অব ওয়াসেপুর ছবিতে অভিনয় তাকে পুনরায় আলোচনায় নিয়ে আসে।
মনোজের ঝুলিতে রয়েছে ২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার এবং ৪টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। সত্যা এবং পিঞ্জর ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পান তিনি। ২০১১ এবং ২০১৩ সালে রাজনীতি এবং গ্যাংস অব ওয়াসেপুর ছবির জন্য সেরা অভিনেতার নমিনেশন পেয়েছিলেন। শূল, সত্যা, আলিগড় এবং তাণ্ডব ছবিতে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। আলিগড় ছবিতে অভিনয়ের জন্য ২০১৭ সালে এশিয়া প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। সম্প্রতি গালি গুলেয়া ছবিতে অভিনয়ের জন্য নিউ ইয়র্ক-ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরষ্কারও পেয়েছেন তিনি।
অভিনয় ছাড়াও এ বছরের গোড়ায় মিসিং নামের সাইকো-থ্রিলার দিয়ে তিনি প্রযোজনার জগতেও পা রেখেছেন মনোজ। ছবিটি যদিও সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি দর্শক মনে।