প্রায় ১০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে রাজস্থানে হয়েছিল প্রথম দুর্গাপুজো। এমনটাই বলছে ইতিহাস। আর সেই ২১০০ বছরের প্রাচীন দুর্গার আদলেই এবার গঙ্গাবক্ষে আস্ত জাহাজের উপর মণ্ডপসজ্জা করে পুজো হচ্ছে হাওড়া রামকৃষ্ণপুর ঘাট সংলগ্ন এলাকায়। রামকৃষ্ণ স্বামীজি বিবেকানন্দ সঙ্ঘের উদ্যোগে এই পুজোয় জাহাজের উপর প্রায় ৬ হাজার কেজি লোহার রড দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। উদ্যোক্তাদের দাবি, ২১০০ বছরের পুরনো দুর্গার আদলে তৈরি ফাইবারের প্রতিমা এবার সকলের নজর কাড়বে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলুমিনেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপকদের পরামর্শমতো করা হচ্ছে আলোকসজ্জা। তাই শুধু রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকেই নয়, এই মণ্ডপসজ্জা দেখা যাবে হাওড়া ব্রিজ, দ্বিতীয় হুগলি সেতু, গ্র্যান্ড ফোরশোর রোড ও কলকাতার প্রান্তে স্ট্র্যান্ড রোড থেকেও। পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের দাবি, এই পুজো এবার হাওড়া তো বটেই, কলকাতার বড় পুজোকেও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে। কেননা, এর আগে আস্ত জাহাজের উপর কোনও মণ্ডপসজ্জা করে এবং এত প্রাচীন দুর্গার আদলে পুজো হয়নি।
পুজো কমিটির সভাপতি সত্যব্রত সামন্ত বলেন, দেশের বহু মিউজিয়াম ঘুরে আমরা এই প্রাচীন দেবীমূর্তির সন্ধান পেয়েছি। রাজস্থানে মাটি খুঁড়ে এই প্রতিমা পাওয়া গিয়েছিল। যা এখন মিউজিয়ামে রয়েছে। আমরা সকলেই জানি, কলকাতায় সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপুজো সাবর্ণ রায়চৌধুরীদের বাড়িতে। কিন্তু, তারও আগে আমাদের দেশে দুর্গাপুজো হয়েছিল। ১০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের এই প্রতিমার আদলে আমরা এ বছর পুজো করছি। ক্রুজে বসেও এই মণ্ডপ ও প্রতিমা দেখা যাবে। তাছাড়া এত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে মণ্ডপসজ্জা আর কোথাও দেখা যায় না।
পুজো কমিটি সূত্রের খবর, কসবার এক শিল্পী ওই প্রতিমার আদলে ফাইবারের এই প্রতিমা তৈরি করছেন। মহালয়ার আগেই তা মণ্ডপে চলে আসবে। এখন মণ্ডপসজ্জার কাজও চলছে জোর কদমে। পুজো কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ইতিহাস ঘেঁটে এই প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে। আর এই রকম মণ্ডপসজ্জায় অভিনবত্ব আর কোথাও আগে হয়নি। এবার অন্যতম আকর্ষণ হতে চলেছে এই পুজো। পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা বলেন, ইলোরার ধাঁচে এই মণ্ডপসজ্জা হচ্ছে। গঙ্গাবক্ষে তার কাজও শেষের দিকে। জাহাজে হাজার হাজার মানুষ উঠে প্রতিমা দর্শনে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই লোহার কাঠামো দিয়ে মণ্ডপসজ্জা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফোরশোর রোডকে আলোর রোশনাইয়ে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে বহু দূর থেকেও এই মণ্ডপসজ্জা স্পষ্ট দেখা যায়।