হাওয়া যে এখন মোদীর উল্টো দিকেই বইছে, তা এবার টের পেয়েছেন শঙ্কর সিং বাঘেলা। ইতিমধ্যেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী জোটের সম্ভাবনা আরও দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তাই হাওয়া বুঝে ফের কংগ্রেসেই পাল তুলতে মরিয়া বাঘেলা। বেশ কয়েকদিন ধরেই বিপরীত বিজেপিকে হারাতে ঐক্যবদ্ধ বিরোধী জোটের পক্ষে সওয়াল শুরু করেছেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘সমস্ত বিজেপি-বিরোধী দলের নিজস্ব স্বার্থ ত্যাগ করে সম্মিলিত বিরোধী ঐক্য গড়তে এগিয়ে আসা উচিত।’ তিনি জানিয়েছেন, বিরোধীদের জন্য কাজ করতেও আগ্রহী তিনি।
প্রসঙ্গত, ১১৯৮ সালে কংগ্রেসে যোগ দেন বাঘেলা। এর আগে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিজেপিতে ছিলেন। গত বছর বিধানসভা ভোটের সময় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে জনবিকল্প মোর্চা তৈরি করে ভোটে লড়েন। যদিও একটি আসনও জিততে পারেননি তিনি। তবে হঠাৎ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর ভূয়সী প্রশংসা করলেন তিনি। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি বিষোদগার করে টুইটও করেছেন। বৃহস্পতিবার একের পর এক টুইট করে তিনি বলেছেন, ‘আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি আমজনতার লড়াই হবে।’ তার মতে, মোদীর হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছে সাধারণ মানুষ। তাঁর নিশানায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘও। সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবতকে টার্গেট করে তিনি বলেছেন, ‘১৯২৫-এর পর এই প্রথমবার আরএসএস সদর দপ্তর নাগপুর থেকে নয়া দিল্লির সাউথ ব্লকে স্থানান্তরিত হয়েছে।’ এই প্রসঙ্গে তাঁর টুইট, ‘জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সঙ্ঘের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। তাদের উদ্দেশ্য হল, দিল্লিতে বিজেপির সরকার টিকিয়ে রাখা।’ রাফাল, জ্বালানি থেকে শুরু করে সব বিষয়েই বিঁধেছেন বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় সরকারকে।
গুজরাট রাজনীতির বর্ণময় চরিত্র বাঘেলা। জরুরি অবস্থায় জেল খেটেছেন। শুরু করেছিলেন আরএসএসের সক্রিয় সদস্য হিসেবে। তারপর জনসঙ্ঘে। জনতা পার্টির টিকিটে সাংসদ হন। তারপর গুজরাটে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হন। পরপর লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদ। ‘৯৫-এ রাজ্যের বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এলেও, তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে ঘি-ঢেলে দেয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী করা হয় কেশুভাই প্যাটেলকে। নরেন্দ্র মোদী সর্বশক্তি দিয়ে বাঘেলাকে রুখেছিলেন। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে মোদীকে কার্যত গুজরাট থেকে নির্বাসিত করে ৪৭ জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন বাঘেলা। এর পর ‘৯৬-এ বিজেপি ছেড়ে নিজের দল ‘রাষ্ট্রীয় জনতা পার্টি’ গঠন করেন। কংগ্রেসের সাহায্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেন। কিন্তু, তারপর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। ‘৯৮-এ কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যায় তাঁর দল। সে বছরই রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরে আসে বিজেপি। ১৯৯৯ ও ২০০৪ সালে পর দু’বার লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে জেতেন। ২০০৪-এ তাঁকে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী করেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। ২০০৯-এর নির্বাচনে পরাজিত হন। ২০১২-র গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের মুখে রাজ্যে কংগ্রেসের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান হন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও হন। এর পর তাঁকে গুজরাট বিধানসভার বিরোধী দলনেতা করে কংগ্রেস। কিন্তু, দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিরোধী দলনেতার পদ কেড়ে নেয় দল।