জোহান ক্রুয়েফের দেখানো তিকি-তাকা স্টাইলের কিছুটা ঝলক শুক্রবার সন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রত্যক্ষ করলেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা। ওয়ান টাচ ফুটবলের শৈল্পিক নৈপুণ্যে বার্সেলোনা লেজেন্ডস দল বিস্ময়াবিষ্ট করে রাখে দর্শকদের। কিক-অফের পর প্রথম দু’মিনিটের মধ্যে প্রায় চল্লিশটি পাস খেলল বার্সার প্রাক্তনীরা। যা দেখে অবাক না হয়ে উপায় নেই। এঁরা যে নিয়মিত এখন একসঙ্গে খেলেন না সেটাও বোঝার উপায় ছিল না। এতটাই বেসিক স্কিল এদের উন্নত। হাসতে হাসতে ডিফেন্স চেরা থ্রু বাড়াচ্ছেন স্যাভিওলা, লিটমানেনরা। লক্ষ্যভেদেও এই দু’জনে নজর কেড়েছেন। প্রথমার্ধে ৩-০ ব্যবধানে লিড নেয় কাতালন ক্লাবটি। দ্বিতীয়ার্ধে আরও তিনটি গোল তারা চাপিয়ে দেয় মোহন বাগানীদের ঘাড়ে। প্রথমার্ধে ৬, ২৮ ও ৪৩ মিনিটে লক্ষ্যভেদ করে বার্সেলোনার প্রাক্তনীরা। মোহন বাগানের প্রাক্তনদের মধ্যে গোলরক্ষক পজিশনে সন্দীপ নন্দী, কল্যাণ চৌবে ও হেমন্ত ডোরা বেশ কয়েকটি কঠিন শট বাঁচালেও রক্ষণ ছিল খুবই নড়বড়ে। তাই কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য ম্যাচের শেষে ডাগ আউট ছেড়ে ওঠার উৎসাহই যেন হারিয়ে ফেলেছিলেন।
নির্বাচনের মুখে মোহন বাগান ক্লাবে এখন তুমুল ডামাডোল। ম্যাচটি যে সুচারুভাবে সম্পন্ন হোক তা অনেকেই চাননি। লেজেন্ডস ম্যাচে ফিফার অনুমতির প্রয়োজন নেই। স্রেফ ফিফাকে জানালেই চলে। তবুও তা নিয়ে চলে বিতর্ক। লেজেন্ডস টিম গঠন নিয়েও চলে কূটকাচালি। এত সব নেতিবাচক দিকের মধ্যেও বার্সেলোনার বিরুদ্ধে ম্যাচটি দেখতে ম্যাটাডোর, মিনিডোর, টাটা সুমো নিয়ে প্রচুর সমর্থক এসেছিলেন যুবভারতীতে। ম্যাচের জন্য বাইপাসে যানজটও হয়। ক্লাব কর্তারা ঝগড়া করলেও এই সমর্থকদের আবেগই ১২৯ বছরের ক্লাবটির সম্পদ। এটা কবে বুঝবেন বিবাদমান কর্তারা? মাঠে দেখা গেল প্রচুর সবুজ মেরুন পতাকা। দর্শকদের দেখে ভিভিআইপিতে থাকা পি কে ব্যানার্জি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তাঁর মুখে বিরতিতে কসমস, আরারাত ম্যাচের কথা। মোহন বাগানের সর্বকালের সেরা ফুটবলার চুনী গোস্বামী টিকিট পেলেও আসেননি। সওয়া সাতটা নাগাদ তিনি জানান, ‘যোধপুর পার্ক অঞ্চলে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। শরীর একটু খারাপ। তাই মাঠে যাচ্ছি না।’ হয়তো ক্লাবের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য ম্যাচটি এড়িয়ে গেলেন চুনী গোস্বামী। ভিভিআইপি টিকিট পেলেও মাঠে আসেননি বদ্রু ব্যানার্জি।
প্রথম একাদশ গড়ার ক্ষেত্রে কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য বেছে নিয়েছিলেন নিয়মিত জেলায় খেলা ফুটবলারদের। তবে স্যাভিওলা, এডমিলসনদের বিরুদ্ধে মোহন বাগানীদের প্রতিরোধ বেশিক্ষণ থাকেনি। বার্সার লেজেন্ডস দল সাত মিনিটেই গোলমুখ খুলে ফেলেন। এটিকে’তে নিয়মিত খেলা হোফ্রের থেকে বল পেয়ে ১-০ করেন স্যাভিওলা। গোলের সময়ে অসহায় লাগছিল দিনের অধিনায়ক অলোক দাসকে। এরপরেই অলোককে তুলে নেন মোহন বাগান লেজেন্ডস দলের কোচ। গোলরক্ষক সন্দীপ নন্দীর তেমন কিছু করার ছিল না। তবে মোহন বাগান দিনের প্রথম সুযোগটি পেয়েছিল। অসীম বিশ্বাস ও রহিম নবি নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে প্রতিপক্ষ বক্সে ওঠেন। তবে নবির সেই শট রুখে দেন বিপক্ষ গোলরক্ষক। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি মোহন বাগানীদের কিছুটা লড়তে দেখা যায়। প্রতি আক্রমণ থেকে বল পেয়ে স্প্যানিশ দলের গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে চিপ করতে গিয়েছিলেন অসীম। কিন্তু প্রখর অনুমানক্ষমতায় সেই বল রুখে দেন বিপক্ষ দুর্গপ্রহরীটি। মোহন বাগানের সেরা খেলোয়াড় অসীম। ২৯ মিনিটে স্যাভিওলার পাস থেকে ২-০ করেন রজার গার্সিয়া। আধ ঘণ্টায় একটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করে তিনি মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২৭-২৮ হাজার দর্শকের হৃদয় জিতে নেন। তারকা ফুটবলাররা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলেন। স্যাভিওলা ৩০ মিনিটে বসে যাওয়ার পরেও ফের দ্বিতীয়ার্ধে নামেন। ৪৩ মিনিটে পরিবর্ত ল্যানডিকে বক্সে ফাউল করলে পেনাল্টি দেন। ল্যানডি পেনাল্টি থেকে ৩-০ করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে অসীম বিশ্বাসের সেন্টার থেকে অমর গাঙ্গুলি গোল করতে ব্যর্থ হন। ৬৩ মিনিটে সেই স্যাভিওলার পাস থেকে ৪-০ করেন লিটমানেন। ৮৮ মিনিটে তিনিই ৫-০ করেন। শেষ মুহূর্তে বেলেত্তির পাস থেকে ৬-০ করেন হোফ্রে। বৃহস্পতিবার প্রেস অ্যাক্রিডেশন কার্ড পেতে ঝামেলায় পড়তে হয় মিডিয়া। এদিন সাংবাদিকরা টিম লিস্ট ছাড়াই ম্যাচ কভার করলেন।
বার্সেলোনা লেজেন্ডস- ৬ : মোহন বাগান লেজেন্ডস- ০
(সংগৃহীত)