বিজেপির ডাকা হাস্যকর বনধকে সর্বাত্মক ভাবে বিরোধিতা করে বাংলার মানুষ প্রমাণ করে দিল তারা উন্নয়নের পক্ষে আছেন। গুন্ডামি করার সব ধরনের প্রচেষ্টা বিজেপি নিলেও, বাংলায় বিজেপির অস্তিত্ব যে আগামী দিনে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে বুধবার তা পরিষ্কার হয়ে গেল। মন্টেসরি স্কুলের শিশুরা, ১২ ক্লাসের পড়ুয়ারা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে গেছে। সরকারি এবং বেসরকারি অফিসের কর্মচারীরা কিভাবে এক দিন কাজে যোগ দিলে তা এক কথায় বনধকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়ার সমান। বনধে নেই, বাংলার মানুষ উন্নয়নের প্রশাসনের সঙ্গে আছেন। ইসলামপুর, ঝাড়গ্রামে দু-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার মতো কেশিয়ারিতে বনধকে ঘিরে একজনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন। এদিন ভোর বেলায় রাজ্যের সকল মন্টেসরি স্কুল গুলো অন্যান্য দিনের মতো খোলা ছিল। বেথুয়াডহরি মন্টেসরি স্কুল থেকে খাস শহর কলকাতার সাউথ পয়েন্ট মন্টেসরির সেকশানেও খুদে পড়ুয়াদের ভিড় ছিল অন্যান্য দিনের মতােই। যাদবপুর বিদ্যাপিঠ, ফিউচার ফাউন্ডেশন সহ রাজ্যের ১২ ক্লাসের স্কুল গুলিতে এদিন অন্যান্য দিনের মতােই পঠনপাঠন হয়েছে। সরকারি অফিস সহ বেসরকারি অফিস সর্বত্র কর্মীরা কাজে এসেছেন। এদিন নবান্নে কর্মচারীদের হাজিরার পরিমাণ ছিল ৯৭ শতাংশ। মহাকরণে ৯৮ শতাংশ, নিউ সেক্রেটারিয়েটে ৯৬ শতাংশ, খাদ্যভবনে ১০০ শতাংশ, বিকাশ ভবনে ৯৮ শতাংশ ছিল হাজিরার পরিমাণ।
শিল্পতালুকে এদিন কোনও প্রভাবই পড়েনি বনধের। রাজারহাট-নিউটাউন, দুর্গাপুর সহ রাজ্যের শিল্পতালুকে এদিন কর্মীরা সময় মতাে কাজে যােগ দিয়েছেন। কগনিজেন্ট, উইপ্রাে সহ রাজ্যের একাধিক তথ্য ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিতে প্রত্যেকে কাজে যােগ দিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলিতে অন্যান্য দিনের মতােই কর্মীরা কাজে এসেছেন। উত্তর চব্বিশ পরগনা, হুগলি, হাওড়ার ব্রিটানিয়া জুট মিল, টিটাগড় ওয়াগন, কেলভিন জুট মিল, এম্পায়ার জুট মিল সহ সকল জুট মিলে এদিন সকালে নিয়ম মেনে শ্রমিকেরা কাজে এসেছেন। বাংলার সর্বধর্ম সমন্বয়ের মানুষের বিজেপির বদ্ধ বিরােধী মনােভাব এবং প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযােগিতার মধ্যে দিয়ে মানুষ কাজে যােগ দিতে সক্ষম হয়েছেন। রাজ্যজুড়ে ছিল প্রশাসনের সতর্ক নজরদারি। সর্বাত্মক ভাবে বনধ ব্যর্থ হওয়ায় দু’ ঘণ্টা আগেই বিজেপি বনধ প্রত্যাহার করে নেয়। বনধকে কেন্দ্র করে এদিন কেশিয়ারিতে একটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর পিছনে বিজেপির যােগ রয়েছে কি না তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। গত কয়েকদিন ধরেই ইসলামপুরে আরএসএস-এর বাহিরাগত কর্মীরা দাড়িভিট স্কুলের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকা উত্তপ্ত করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব অনবরত উসকানি দিয়ে গেছে। ইলসামপুরে দুটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেয় বিজেপির কর্মীরা। আগুন নেভাতে গেলে দমকলের ওপর ইট ছােড়া হয়। ঝাড়গ্রামেও অশান্তি ছড়ানাের চেষ্টা করে বিজেপি সমর্থকেরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়ারিতে গন্ডগােলে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। খানিকক্ষণের মধ্যেই এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে এরিয়া ডমিনেশন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এদিন বিকেলে এডিজি আইনশৃঙ্খলা অনুজ শর্মা বলেন, ‘এদিন বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১৬৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সকাল থেকে জনজীবন ঠিক রাখতে রাস্তায় নেমে অপরদিকে নবান্ন থেকে নজরদারি চালানাে হয় প্রশাসনের তরফে। এদিন রাজ্যজুড়ে বিরাট পুলিশ বাহিনী মােতায়েন ছিল। নবান্ন থেকে ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানাে হয়। সকালে নবান্ন সহ যে সকল সরকারি অফিসে কর্মচারীরা প্রবেশ করেছেন, এদিন প্রত্যেকের আই কার্ড পরীক্ষা করা হয়। জন জীবন সচল রাখতে উল্লেখযােগ্যভাবে এদিন সচল ছিল পরিবহন ব্যবস্থা। প্রতিদিন রাজ্যজুড়ে ২১৫০ সংখ্যক সরকারি বাস চলে। বুধবার বন্ধের দিনে আরও অতিরিক্ত ৫৫০টি বাস চালানাে হয়। প্রতিদিন কলকাতা শহরে ৩০টি ট্রামের থেকে এদিন রাস্তায় ৫০টির বেশি ট্রাম চালানাে হয়। অন্য দিনগুলিতে জলযানের সংখ্যা থাকে ৩০টি। এদিন দ্বিগুন অর্থাৎ ৬০টির কাছাকাছি জলযান চালানাে হয়েছে। পরিবহন ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়লে একটি হােয়াটসঅ্যাপ নম্বরে নিজেদের অভিযােগ জানানাের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল পরিবহন দফতরের তরফে।