আগুনের লেলিহান শিখা আর নেই। বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের পর কেটে গেছে আট দিন। এই অগ্নিকান্ডে সব পুড়েছে, কিন্তু শেষ করতে পারেনি বাঁচার লড়াই। বাগরির ঘটনার এক সপ্তাহ বাদে রবিবার ক্যানিং স্ট্রিট ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট। প্রতিবেশী ব্যবসায়ীর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে নিজেদের রুজি-রুটির তাগিদে আবার দোকানের শাটার খুললেন ব্যবসায়ীরা। শুধু ব্যবসায়ী নন, পাশাপাশি দেখা গেল গোটা ক্যানিং স্ট্রিট জুড়ে ডালা নিয়ে হকাররা বসে পড়েছেন নিজেদের সামগ্রী বিক্রি করতে। উৎসব মরশুমের কথা মাথায় রেখে দুর্ঘটনাস্থল বাদে গোটা ক্যানিং স্ট্রিটে সাধারণের যাতায়াত প্রশাসন শিথিল করেছে। আস্তে আস্তে দুর্ঘটনার ঘোর কাটিয়ে জেগে উঠছে গোটা বাগরি মার্কেট এলাকা। স্বাভাবিক হয়েছে ক্যানিং স্ট্রিটের আশপাশের নাগরিক পরিষেবাও। এরই পাশাপাশি চলছে পুড়ে যাওয়া মার্কেটে সাফাইয়ের কাজ।
শনিবার রাত থেকে বাগরি মার্কেটের পাশে আমড়াতলা স্ট্রিট, বিআরবিবি রোড-সহ বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সিইএসসি-র এক আধিকারিক জানান, রবিবার সন্ধের মধ্যে আরও কিছু জায়গার বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়ে যাবে। এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা চালুর জন্য বাগরি মার্কেটের উল্টোদিকে থাকা হাই পাওয়ার ট্রান্সফর্মার সারাই করেছে সিইএসসি-র কর্মীরা। বিদ্যুৎ চালু হওয়ার পরই রবিবার সকাল থেকে খুলে যায় পুড়ে যাওয়া মার্কেটের পাশে থাকা ৮০ বছরের পুরনো নিউ প্যারাডাইস রেস্তোরাঁ। সাত দিন বন্ধ থাকার পর রেস্তোরাঁটি খোলায় খুশি কর্মীরা। ম্যানেজার মহম্মদ মুর্তাজা জানান, ‘দুর্ঘটনার জন্য ব্যবসায় প্রভাব পড়বে ঠিকই, কিন্তু আবার কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি।’ প্রতিবেশীর জন্য মন খারাপ থাকলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় খুশি ব্যাগ ব্যবসায়ী আদিল খান, খাবারের দোকানের মালিক চেতন পারেখ, প্রসাধনী দোকানের মালিক ইসমাইল সহ এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী আনোয়ার আলম।
রবিবার সকালে দেখা গেল মার্কেটের সি এবং ডি ব্লকের পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ সাফাই করছেন পুরকর্মীরা। মার্কেটের সামনে পোড়া সামগ্রীর ছাই জমা করা হচ্ছে। পুর আধিকারিক রয়েছেন কাজের তদারকির জন্য। পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (এসডব্লুএম) মনোজকুমার মুর্মু জানান, সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৭০ জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী মার্কেটের সাফাইয়ের কাজ করছেন। প্রশাসনের সব বিভাগের সহযোগিতায় আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন বাগরি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশুতোষ সিং। তিনি জানান, প্রশাসনকে ধন্যবাদ, দুর্ঘটনার সময় সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য। ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সরকার তাঁদের পাশে থাকবে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি। আশুতোষবাবু আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রীর ওপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস আছে। বাগরির অগ্নিকাণ্ডের পর যেভাবে প্রশাসন সহযোগিতা করছে তাতে খুশি ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাতে আগামী সোমবার মার্কেটের মূল ফটক থেকে বড়বাজার থানা পর্যন্ত মৌনমিছিল করবে ব্যবসায়ী সংগঠন।
কাল, মঙ্গলবার দগ্ধ বাগরি মার্কেটের বিল্ডিংয়ের অবস্থা খতিয়ে দেখতে আসবে খড়্গপুর আইআইটি’র একটি বিশেষজ্ঞ দল। কলকাতা পুরসভার তরফে চিঠি দিয়েই তাদের এ ব্যাপারে আবেদন করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, ওই দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ কয়েকজন নির্মাণ-বিশেষজ্ঞ এসে বাগরি মার্কেটের বিল্ডিংয়ের স্থায়িত্ব, ধারণ ক্ষমতার মতো নানা দিকগুলির বিচার-বিশ্লেষণ করবেন। তার আগে ছ’তলা বাজারের সমস্ত প্যাসেজ ও সিঁড়ির ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলা হবে। সেই কাজ এখন চলছে জোরকদমে। প্রশাসনের সহযোগিতায় আবার নতুন করে বাঁচার লড়াইয়ের স্বপ্ন দেখছে ব্যবসায়ী, হকার থেকে শুরু করে ক্রেতারাও।