প্রশ্ন ১ ছাত্র হত্যার কোনও ক্ষমা নেই। তারপরও কোন লজ্জায় শাসক দল, সরকার, প্রশাসন এবং আপনার মতন সো কলড তৃণমূলের চামচারা এই অন্যায়ের জাস্টিফিকেশন দিতে ব্যস্ত?
উত্তরঃ দুই তরুণের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক এবং মর্মান্তিক। যে কোনও সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষই এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা করবেন। যে ক্ষতি এই দুই পরিবারের হয়ে গেল, কোনও ক্ষতিপূরণেই তা পূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা সবাই দুটি তরুন প্রানের অকালে স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ করেছি। পাশাপাশি অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। তদন্তে পুলিশ দোষী প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক, এটাও আমরা চাই। পরিবর্তনের সরকার নিতান্তই নিরুপায় হয়ে, প্রান রক্ষার দায় ছাড়া (সেক্ষেত্রেও বাকি সব রকম উপায় ব্যর্থ হলে) পুলিশের গুলি চালানোর তীব্র বিরোধী। এটাই তাদের প্রকাশ্য ঘোষিত নীতি। তাই আমরা কোনও জাস্টিফিকেশন নয়, শুধু তদন্ত চাইছি। যদি কোনো পক্ষের মনে হয় তদন্ত নিরপেক্ষ হয় নি তাহলে মহামান্য আদালতের দরজা খোলা আছে। কিন্ত পুলিশ যখন বারবার বলছে, তারা গুলি চালায় নি তখন তাদের নিজেদের বক্তব্য প্রমানের সুযোগ না দিয়ে অপরাধী বানিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করেছি এবং করছি। এটাকে নির্লজ্জ জাস্টিফিকেশন বলা হলে নিরুপায়।
প্রশ্ন ২ ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ কেন গুলি চালাল?
উত্তরঃ বাম জমানায় একের পর এক গণ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রতিবাদীদের অকাল মৃত্যুর বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই বর্তমান সরকারের উঠে আসা। তাই স্বাভাবিক কারণেই সেই সরকার কখনই চাইবে না, তার পুলিশ প্রশাসনের গুলিতে কোনও প্রতিবাদীর অকাল মৃত্যু হোক। পুলিশ বলছে তারা কোনও গুলি চালায়নি। নিহতদের পরিবার বলছে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের মধ্যেও বিস্তর ফারাক আছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় বা ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইলে ওই ঘটনার প্রচুর ভিডিও ক্লিপিংস পাওয়া গেলেও পুলিশের গুলি চালানোর কোনো ছবি এখনও পর্যন্ত মেলেনি। কোনও জেলা সাংবাদিকও এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না, গুলি কারা চালিয়েছিল। উল্টে পুলিশ বলছে পরিমল অধিকারী নামে এক কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের গুলির হিসেব খুব সহজেই পাওয়া যায়। কারণ, প্রতিটি কার্তুজের রেকর্ড থাকে। এবং মৃতদেহের শরীরের আঘাত থেকেও বোঝা সম্ভব সেটা পুলিশের গুলিতেই হয়েছে কিনা। তাই পুলিশের পক্ষে অপরাধ করে বেমালুম চেপে দেওয়া অসম্ভব, অন্তত এই শক্তিশালী মিডিয়ার যুগে। তাই যেই গুলি চালাক নিশ্চিত সে ধরা পড়বেই। সে যত বড় কেউকেটাই হোন না কেনও। শুধু তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই হাওয়ায় জাজমেন্ট দিয়ে কাউকে দোষী বানিয়ে ফেলবেন না। আপনার কাছে যখন সামান্যতম কোনো তথ্য প্রমাণ নেই তখন কাউকে বিনা তদন্তে দোষী বানিয়ে দেওয়াও সমর্থনযোগ্য নয়।
যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় পুলিশের গুলিতেই ওদের মৃত্যু হয়েছে তাহলে প্রতিবাদের পথে আপনাদের পাশেই আমাকে এবং রাজ্যের প্রতিটি তৃণমূল কর্মীকে পাবেন।
প্রশ্ন ৩ নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে পুলিশের গুলিচালনার বিরোধিতা করে সরকারে বসা তৃণমূল এখন গনতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতে সেই পুলিশের ট্রিগার হ্যাপি চরিত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এমন নির্লজ্জ দ্বিচারিতা কেন?
উত্তরঃ পরিবর্তনের জমানার ৭ বছরে পুলিশকে যে দু-তিনটি ঘটনায় গুলি চালাতে হয়েছে সেগুলিতে পুলিশের আগ্রাসনের থেকে আত্মরক্ষার তাগিদই বেশি ছিল। একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাদের গুলি চালাতে হয়েছিল। নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে টিভির পর্দায় পরিস্কার দেখা গেছে পুলিশ ও সিপিএমের ক্যাডার বাহিনী একত্রে জনসাধারণের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। সিপিএম নেতৃত্বের ভাবখানা ছিল, যা হয়েছে বেশ হয়েছে। আবার করলে এমনটাই আবারও হবে। মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ অনেক দূরের ব্যাপার। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ও শাসক দলের কোনও স্তরেই এই নির্মম দম্ভ ও ‘কুছ পরোয়া নেহি’ মনোভাবে পুলিশকে গুলি করে মানুষ মারার জন্য প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। বরং অভিযোগ প্রমাণ হলে শাস্তির কথা বলা হয়। আর পুলিশের সঙ্গে মিলে তৃণমূল কর্মীদের সাধারন মানুষের ওপর আক্রমণ করার অভিযোগ স্বয়ং বিরোধীরাও করতে পারবে না। ইসলামপুরের ঘটনায় পুলিশ গুলি চালিয়েছে তার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায় নি। তবুও আমরা বলছি প্রতিটি মৃত্যুই যন্ত্রনাদায়ক। অপরাধীদের খুজে বের করে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে সে যেই হোক না কেন। এই সদিচ্ছা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল পরিবারে আছে বলেই পুরুলিয়ার বিজেপি কর্মীর খুনের ঘটনায় তৃণমূলের ৩ নেতা-কর্মীকে অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাই তৃণমূলের সঙ্গে দ্বিচারিতার গল্প জুড়ে কোনও লাভ নেই।
প্রশ্ন৪ ছাত্র আন্দোলনে পুলিশকে লাঠি, টিয়ার গ্যাস কেন চালাতে হল?
উত্তরঃ পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেল সেটা তদন্তসাপেক্ষ। কতটা পুলিশের দক্ষতার অভাব, আর কতটা এই আন্দোলনে ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে এলাকার দুষ্কৃতী ও উগ্র মানসিকতার লোকজনদের জড়িয়ে পড়ার ফল, তাও তদন্তের বিষয়। অপরাধ যারাই করুক, শাস্তি পাবেই। কিন্তু ছাত্র ছাত্রীদের ‘শান্তিপূর্ণ’ আন্দোলনে পুলিশকে লক্ষ্য করে কারা ইট-পাথর-বোমা কারা ছুঁড়ল? কারা শিক্ষকদের আহত করল? এত বহিরাগত কোথা থেকে এল?
প্রশ্ন.৫ এই মর্মান্তিক ঘটনায় তৃণমূল কেন রাজনীতি করছে?
উত্তরঃ বিভাজনের মানসিকতা নিয়ে প্রথম থেকেই এই আন্দোলনে স্কুলের নাবালক ছাত্র ছাত্রীদের সামনে রেখে এলাকার বিরোধী শক্তি সংগঠিত করছিল। তার প্রমাণ প্রথমত, সুচতুরভাবে স্কুলের সংস্কৃত শিক্ষকের যোগদানের বিষয়টি প্রচারের বাইরে রেখে শুধুমাত্র উর্দু শিক্ষকের যোগদানের বিষয়টি তুলে ধরা। যাতে সহজেই বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িক সুরসুরি দিয়ে লোক ক্ষেপানো যায়। রাজনীতি করেই মৃত তরুণের দেহ বিজেপি-র পতাকায় ঢেকে দেওয়া হয়। রাজনীতি করেই একটা স্কুলের পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্তকে রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘু তোষনমূলক সিদ্ধান্ত বলে প্রচার করা হয়। বিজেপি-র ছাত্র সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেখলেই পরিস্কার হয়ে যাবে কারা এই মর্মান্তিক ঘটনায় রাজনীতি করছেন।
প্রশ্ন৬ উর্দু শিক্ষকের প্রয়োজন না থাকলেও কেন উর্দু শিক্ষক পাঠানো হল?
উত্তরঃ সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। স্কুলটি বাংলা ও উর্দু, উভয় মাধ্যমের স্কুল। এবং অনুমোদিত উর্দু শিক্ষকের পদ দুটি। কিন্তু নিয়োগ সংক্রান্ত নানা জটিলতার কারণে, দুইজন উর্দু শিক্ষক অবসর নেওয়ার পর নতুন কোনও উর্দু শিক্ষক এই স্কুলে আসেন নি। শিক্ষক না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই গত কয়েকবছর এই মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি নেওয়া বন্ধ ছিল। কিন্তু এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের এবং তাদের অভিভাবকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই স্কুল কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত দুটি উর্দু শিক্ষকের পদ পূরণের রিকুইজিশন পাঠান। নতুন নিয়োগ শুরু হওয়ার পর শুন্যপদ মেনে এই বিদ্যালয়ে আপাতত একজন উর্দু শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এতে অন্যায় বা বেনিয়ম কোথায়? ছাত্র-ছাত্রীরা বাধা দেন কোন সাহসে এবং এর পেছনে কাদের উস্কানি?
যে যে বিষয়ে শিক্ষক দরকার তার জন্য দাবী করা যেতেই পারে কিন্তু অনুমোদিত পদে স্কুলের চাহিদামতন শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার পর তাকে যোগদান করতে না দেওয়া কোনও ছাত্র আন্দোলন হতে পারে না। যারা আন্দোলনের প্রথম দিন ছাত্র-ছাত্রীদের দাবী মেনে লিখিত মুচলেকা দিয়েছিলেন উর্দু শিক্ষক আসবে না বলে, প্রথম ভুল তারাই করেছিলেন। স্কুলে আগে কোন বিষয়ের শিক্ষক যোগ দেবে সেটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল,ছাত্রছাত্রীদের ইচ্ছের ওপর নয় এটা প্রথমেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বুঝিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। সেটা না করে তারা ছাত্র ছাত্রীদের অন্যায় ও গর্হিত দাবীর কাছে মাথা নত করে প্রথমেই বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছেন। তারপর ভুল বুঝতে পেরে যখন সিদ্ধান্ত বদল করেন তখন পরিস্থিতির রাশ স্থানীয় ধর্ম ব্যবসায়ী বিরোধী শক্তির হাতে চলে গেছে। এবং তারা অকালে চলে যাওয়া দুটি প্রানের বিনিময়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন।
( মতামত লেখিকার ব্যক্তিগত )