এ রাজ্যের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ঘোষিত অবস্থান – যে কোনও পরিস্থিতিতেই তৃণমূলের সঙ্গে কোনও জোট করবে না কংগ্রেস। মালদায় কংগ্রেসের ‘তথাকথিত গড়’- এর রক্ষাকর্ত্রী মৌসম বেনজির নুর আবার পঞ্চায়েত ভোটের পর বোর্ড গঠনে সরাসরি বিবৃতি দিয়ে তৃণমূলের সমর্থন নেওয়ার কথা বলেছেন। মালদা জেলার অপর কংগ্রেস সাংসদ তথা গনি পরিবারের প্রতিনিধি আবু হাসেম খান চৌধুরিও(ডালু) মৌসমকেই সমর্থন করেছেন একপ্রকার। এই পরিস্থিতিতে এই জল্পনাই ক্রমশ জোরালো হচ্ছে যে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কি মামা-ভাগ্নী তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়াবেন?
সরাসরি এই প্রশ্ন করায় মৌসমের দ্রুত জবাব, ‘না না, তেমন কিছু নয়। পঞ্চায়েতে বিজেপি-কে আটকাতে আমরা তৃণমূলের সাহায্য নেওয়ার কথা বলেছি। তাছাড়া তো এখন উপায় নেই। কিন্তু আমরা তৃণমূলের হয়ে ভোট লড়ব, এখনও তেমন ভাবনাচিন্তা নেই।’ রাজ্যের বিরোধী শিবিরকে ভাবাচ্ছে মৌসমের ‘এখনও’ শব্দটি। তাদের মতে, মৌসমের কথার নিহিতার্থ, এখন না হলেও ভবিষ্যতে পরিস্থিতি অনুযায়ী তা হতেই পারে। অর্থাৎ, মালদার কোতোয়ালি প্রাসাদ খোলামনেই বিষয়টি বিবেচনাধীন রাখছে। এটা ঘটনা যে, মৌসমরা মনে করেন, জোট না হলে লোকসভা ভোটে তাঁদের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে (বস্তুত, প্রদেশ রাজনীতিতে মৌসমের ঘনিষ্ঠদের দাবি, মুখে যাই বলুন, দিল্লির কাছে প্রদেশ সভাপতিও তৃণমূলের সঙ্গে জোটের পক্ষেই সওয়াল করে এসেছেন। যদিও অধীর ঘনিষ্ঠরা সেকথা উড়িয়ে দিচ্ছেন)। পাশাপাশি, এও ঠিক যে, মুর্শিদাবাদ এবং মালদা জেলায় বাড়তি নজর দিয়েছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের সমস্ত জেলা পরিষদে নিরঙ্কুশ জয়ের পর তৃণমূলের আধিপত্য আরও বেড়েছে। বেড়েছে আত্মবিশ্বাসও।
গত একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, আগামী লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৪২টি আসনের ৪২টিই পাবে তৃণমূল। যার অর্থ খুব স্পষ্ট, তৃণমূল রাজ্যে একাই লড়বে। ৪২টি আসনেই প্রার্থী দেবে তারা। সেক্ষেত্রে যে ৪টি আসন কংগ্রেসের আছে (২টি মালদায়, ২টি মুর্শিদাবাদে), সেগুলিতে হয় মমতা প্রার্থী দেবেন অথবা কংগ্রেসের সাংসদদের তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়াতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে তাতে ডালু, মৌসম এবং জঙ্গিপুরের সাংসদ অভিজিৎ মুখার্জির সমস্যা থাকার কথা নয়। যদি না ইতিমধ্যেই ওই ৩টি কেন্দ্রে তৃণমূলের একেবারেই নিজস্ব কোনও দাবিদার তৈরি হয়ে থাকে। বাকি রইল বহরমপুর। সেই আসনটি অধীরকে ছাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণতম বলেই তৃণমূলের সমস্ত স্তরের নেতৃত্বের ধারণা। যেমন অধীরের পক্ষেও তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা সুদূরপরাহত। কারণ, মমতার সঙ্গে তাঁর সমস্ত স্তরেই সম্পর্ক অত্যন্ত খারাপ। সেই জায়গাটাতেই খানিকটা এগিয়ে মামা-ভাগ্নী। প্রথমত, গনি পরিবারের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক বরাবরই ভাল। দ্বিতীয়ত, তাঁরা ২ জন সংখ্যালঘু রাজনীতিকও বটে। ফলে মালদা জেলায় ‘তৃণমূলের মুখ’ হিসেবে তাঁরা ‘গ্রহণযোগ্য’ হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে ডালু-মৌসম যে এখনও তেমন কিছু ভাবছেন না, তাঁদের ঘনিষ্ঠরা এমনটাই জানাচ্ছে। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে তাঁরা চাইছেন কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট হোক এবং তাঁরা কংগ্রেসের হয়েই দাঁড়ান। একান্তই তা না হলে তবেই তাঁরা তৃণমূলের কথা ভাববেন। মৌসমের ঘনিষ্ঠ এক জেলানেত্রীর কথায়, ‘তেমন পরিস্থিতি এলে সেটা বসে আলোচনা করতে হবে। দেখতে হবে, তৃণমূলের তরফে কী বলা হচ্ছে। তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সেজন্য এখনও সময় রয়েছে। ২০০৯ আর ২০১১ সালে তো কংগ্রেস-তৃণমূল জোট গড়ে লোকসভা আর বিধানসভায় লড়েছিল। আবার ২০১৬ সালে সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। ফলে কংগ্রেসের জোট গড়ার ইতিহাস এ রাজ্যে আছে। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজেপিকে ঠেকাতে জোটে কোনও তরফেরই আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে সর্বভারতীয় রাজনীতির ওপর।’ ব্যাপারটাকে যতই লঘু করে দেখাতে চাক কংগ্রেস, মামা-ভাগ্নীর লোকসভা অভিযানের দিকে বিশেষ নজর থাকবে রাজ্য রাজনীতির।