যখন ১২ বছর ধরে ভুল শাস্তি ভোগ করার পর প্রমাণিত হয়, প্রশান্ত চ্যাটার্জী (ছবি বিশ্বাস) হেমাঙ্গীনি খুনের অপরাধী নন। কোর্ট রুমে দাঁড়িয়ে তাঁর সেই বিখ্যাত আর্তনাদ “ফিরিয়ে দাও আমার ১২ বছর….” মনে পরে কিনা দেখুন তো?
সম্প্রতি জাকার্তায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এশিয়ান গেমস। স্বর্ণপদক এবং সর্বমোট পদকের সংখ্যার নিরিখে এবছরের সাফল্যটা ভারতের গেমসে্র ইতিহাসে বেশ উঁচুর দিকেই থাকবে বইকি।
তবে দ্যুতি চাঁদের ১০০ মিটারের রূপোটা সবচেয়ে বেশি মন ছুঁয়ে গেল। আসলে ভেবেছিলাম বাংলার পিঙ্কী প্রামাণিকের কষ্ট হয়ত আর কাউকে কোনোদিন পেতে হবে না, কিন্তু পেতে হল। দ্যুতির দোষ বলতে ২০১৪ সালের এক রিপোর্ট (IAAF) অনুযায়ী হাইপারএন্ড্রোজেনিসম্ অর্থাৎ শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য। ফলত কমনওয়েলথ, এশিয়ান গেমস এমনকি ন্যাশনাল ক্যাম্প থেকেও বার করে দেওয়া হয়েছিলো দ্যুতিকে সঙ্গে দু’বছরের জন্য নির্বাসিত। অথচ ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই থেকে একটা মেয়েকে ঠিক যতরকম চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়, দ্যুতিকেও কিন্তু সবকটাই করতে হয়েছিল। তারপর এরকম একটা শাস্তি মানে তো এতদিনের পরিশ্রম নিজের চোখের সামনে শেষ হয়ে যেতে দেখা। কিন্তু দুবছর পর প্রমাণিত হলো যে টেস্টোস্টেরনের এই পরিমান আধিক্য কোনোভাবেই স্প্রির্ন্টারের পারফরমেন্সকে বুস্ট করে না। এই রায়ের পরই দ্যুতি আবার ট্র্যাকে ফিরে আসতে পারে এবং এসেই এই রূপো। দ্যুতির এই কামব্যাক, এই সাফল্যের পেছনে হয়ত কোচ নাগপুরী, গোপীচাঁদ একাডেমীর বন্ধু কাদম্বি শ্রীকান্ত, পি ভি সিন্ধু বা জার্মান প্রফেসর রাল্ফ একার্টের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে, কিন্তু যে মানসিক কষ্টটা, যে অনিশ্চয়তাটা ভোগ করতে হয়েছে দু বছর ধরে তার দায় নেবে কে ?
একজন ট্র্যাক এন্ড ফিল্ড অ্যাথলিটের জীবনের টিনএজ, ঠিক যে সময় সে পারফরমেন্সের চূড়োয় থাকে, সেই সময় দুটো গুরুত্বপূর্ণ বছর কেড়ে নেওয়ার মানেটা বোধহয় বিনা দোষে ১২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ভোগের থেকে কিছু অংশে কম নয়। তবে এক্ষেত্রে সবাই চুপ। প্রশান্ত চ্যাটার্জীকে (ছবি বিশ্বাস) আদালত যেমন সেদিন পারেনি ফিরিয়ে দিতে তাঁর ১২ বছর, পারেনি দ্যুতিকেও তাঁর দু’বছর ফিরিয়ে দিতে। তবু হয়ত দ্যুতিকে কোনও বিজ্ঞাপনে এসে বলতেই হবে ‘খেলেগা ইন্ডিয়া তো বদলেগা ইন্ডিয়া’।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )