খাদির নতুন জামা সঙ্গে নতুন সাদা ধুতি, সাথে চকচকে পালিশ করা কালো বাটার জুতো। বয়সবসন্তে গোটা আটান্নো ছোঁয়া এহেন ভূষনে ভূষিত হরিপদ ভটচায্ তিনতলা সিঁড়ি বেয়ে হন্তদন্ত হয়ে নিজের অফিসে ঢুকে অভ্যেসমাফিক চামরার ছোট্ ব্যাগটা নিজের টেবিলে রেখে, ঐ টেবিলেই রাখা জলের গ্লাস খেকে ঢাকা সরিয়ে সবে জলটা খাবেন বলে গ্লাসটা হাতে তুলেছেন, ব্যাস অমনি পাশ থেকে বছর চল্লিশের তাপস মন্ডলের প্রশ্নবাণ।
-তা ডাক্তার কি বললে হরিবাবু ?
-(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) ক্রনিক মশাই, ক্রনিক। সময় লাগবে।
-তবে যাই বলুন এত বছর দেখছিতো আপনাকে, এই বর্ষাকালেই আপনার ঐ ইয়ে টা কিন্তু একটু বেড়ে যায়। তা এবার থেকে জলটা একটু বুঝে শুনে খাবেন। কিন্তু ডাক্তার যাই বলুক, আপনাকে আজ বেশ চনমনে দেখাচ্ছে। সাথে নতুন জামা। কি ব্যাপার হরিবাবু? স্পেশাল কিছু নাকি ?
এমনিতেই এই তাপসটাকে ঠিক সহ্য হয় না, উফফ্ কথাটা শুনেই একরকম বিরক্তির সাথে আধঢোক খাওয়া জলের গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখলেন হরিবাবু। বিশেষ উত্তর দিলেন না।
মনে মনে ভাবলেন এই পেটরোগা বদনামটা নিয়ে আর বছর দুই চাকরিটা টেনে দিতে পারলেই বেঁচে যান। দিনকাল বড্ড খারাপ।
এরপর দু বছর পর, (রিটায়ারমেন্টের দিন)
সুদীর্ঘ ৩৬ বছরের চাকুরীজীবন শেষ করে পুস্পস্তবক আর কিছু গিফ্ট গ্রহন করার পরই আসল মজার ঘটনাটা ঘটল।
সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়ে হরিবাবু সগর্বে জানালেন, পেট তার সবসময়ই ঠিক। তবু চাকুরীজীবনে বেশ কিছুদিন লাঞ্চের পর তাঁর পেট ব্যাথার কথা বলে অফিস কেটে বেরোনোটা ছিল স্রেফ অজুহাত। আসল কারনটা হলো-
কথাটা শেষ করার আগেই বড়োবাবু মানে হরিবাবুর অফিসের বস্ থামিয়ে দিলেন হরিবাবুকে।
সবাই ততক্ষনে হাঁ করে অপেক্ষায়। হরিবাবু আমাদের সকলকে তবে মিথ্যে বলে গেছেন দিনের পর দিন। অভিমান মিশ্রিত চোখগুলো এবার উত্তর খুঁজছিল।
বড়োবাবু সকলকে জানিয়ে দিলেন, হরিবাবু মাঝে মাঝে অফিস থেকে বেড়িয়ে সোজা মোহনবাগানের খেলা দেখতে যেতেন। আর সেটা তিনি বিলক্ষন জানতেন।
এবার কিন্তু উপস্থিত সকলের মাঝে সবচেয়ে অবাক হরিবাবু নিজে। মানে কিভাবে ? কিভাবে জানলেন বড়োবাবু একথা। আর কোনোদিন হরিবাবুকে আটকালেন নাই বা কেন?
বড়োবাবু জানালেন, জানতে পারতুম না যদি না আপনার পাঠানো ফাইলের মধ্যে এ টিকিটটি না পেতাম, বলেই নিজের পকেট থেকে টিকিটটি বের করে দেখালেন সকলকে।
লজ্জায় রাঙা হরিবাবু শেষদিন যে এমন অপদস্থ হবেন তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। তবু মুখ নামিয়ে প্রশ্নটা করেই ফেললেন, আমায় কখনও যেতে বাঁধা দেননি কেন বড়োবাবু ?
বড়োবাবুর উত্তর “মেম্বারশিপটা এবছর রিনিউএর শেষ দিন কবে দিয়েছে বলুনতো ? আমারটাও রিনিউ করাতে হবে যে। আর মিষ্টির হাঁড়িটা যে সকলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে, তা লীগ জয়ের জন্য খাওয়াবো, নাকি ফেয়ারওয়েলের জন্য ? “
সকলের হো হো হাসি আর মিষ্টিমুখের সাথে হরিবাবু বিদায়টাও চির সুখের হয়ে রইলো।
(প্ল্যাটিনাম জুবিলি ম্যাচের মোহনবাগান বনাম হাঙ্গেরী ম্যাচের টিকিট যা হরিবাবুকে বিপদে ফেলেছিল)