পুজোর থিমেও বাংলা মমতাময়! হ্যাঁ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কবিতা এবছরও দুর্গাপুজোর থিম ভবানীপুর স্বাধীন সঙ্ঘের। এই নিয়ে পর পর তিন বছর মমতার কবিতায় মণ্ডপ গড়ছে দক্ষিণ কলকাতার এই দুর্গাপুজো কমিটি। তবে এবার আর বাংলা কবিতা নয়। সাঁওতালি ভাষায় লেখা মমতার এক কবিতাকে বেছে নেওয়া হয়েছে এবছরের পুজোর থিম হিসেবে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা, মারাঠা, পাঞ্জাব ও দেশের অন্য অংশের মানুষের মতো সাঁওতালদেরও এক বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু তাদের সেই আত্মত্যাগ সেভাবে প্রচার পায়নি। আড়ালেই থেকে গেছে চিরকাল।
ভারতের মুক্তি সংগ্রামে আদিবাসী মানুষজনের অবদানের কথা স্মরণ করে সাঁওতালি ভাষায় ‘জয় জিৎকৌর দেবন মেনা’ নামে একটা কবিতাটি লিখেছিলেন মমতা। বাংলা করলে যার অর্থ দাঁড়ায় ‘আমরা করব জয়’। কাঠের ওপর খোদাই করে কবিতাটির ‘পুনর্লিখন’ হচ্ছে স্বাধীন সঙ্ঘের পুজোর জন্য। মণ্ডপটিতে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে সাঁওতাল বিদ্রোহের কাহিনী, তাদের নানা উৎসবরে দৃশ্য। বুট জুতো পায়ে, বন্দুক হাতে ব্রিটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে খালি পায়ে তীর–ধনুক সম্বল করে লড়াই করেছিল সাঁওতালরা। এই বিদ্রোহ চলাকালীন দুর্গাপুজোও করেছিল তারা। এসবই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মণ্ডপটিতে। ২ শিল্পী সুব্রত দে ও রাজা চক্রবর্তীর পরিকল্পনায় হোগলাপাতা, নারকেল গাছের বাকল, ভুট্টা পাতা, কয়েতবেলের খোলা, মাটির হাঁড়ি, প্রদীপ দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই মণ্ডপ। কোনও রং ব্যবহার হচ্ছে না মণ্ডপটিতে। সাঁওতাল বিদ্রোহ ছাড়াও তাদের নানা উৎসবের দৃশ্যও থাকছে মণ্ডপে। তবে শুধু উৎসবের দৃশ্য নয়, নিজেদের সংস্কৃতি কলকাতার মানুষের কাছে তুলে ধরতে, পুজোর সময় ধামসা–মাদল নিয়ে হাজির থাকবেন সাঁওতালি শিল্পীরা। মাদলের তালে তালে পা মেলাবেন নৃত্যশিল্পীরা। মন্ডপের বাইরে বিক্রি হবে আদিবাসী বাদ্যযন্ত্রও। এছাড়া সাঁওতাল বিদ্রোহকে সম্মান জানাতে মণ্ডপের বাইরে থাকছে ফাইবারের তৈরি সিধো–কানহুর বিশাল মূর্তি।
জানা গেছে, কৃষ্ণনগরের এক মৃৎশিল্পী এই পুজোর জন্য ১৮ হাতের এক দুর্গামূর্তি গড়ছেন। সাঁওতালি সুরে এই পুজোর জন্য তৈরি হচ্ছে থিম মিউজিক। ২০১৬ সাল থেকে মমতা ব্যানার্জির লেখা কবিতাকে থিম করে মণ্ডপ গড়ে আসছে ভবানীপুর স্বাধীন সঙ্ঘ। প্রথমবারের থিম ছিল মমতার কবিতা ‘সোনার বাংলা’। গত বছর আবার তাঁর ‘সবুজ’ কবিতাটি ছিল এই পুজোর থিম। সেবার থিম সং- এর সুর দিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং। সেই সুরে থিম সং গেয়েছিলেন রূপঙ্কর ও শ্রীজিৎ। তবে এ বছর এখনও অবধি থিম সং- এর সুরকার ও শিল্পী এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি উদ্যোক্তারা। তবে মমতার কবিতার মন্ডপ-রূপ চাক্ষুষ করতে যে উপচে পড়বে দর্শনার্থীদের ভিড়, তা বলাই বাহুল্য।