ভারত-বিখ্যাত বিজ্ঞানী তিনি। ইসরোয় গবেষণারত অবস্থায় ভারতে তরল জ্বালানি দিয়ে রকেট চালানোর পদ্ধতির অন্যতম প্রবর্তক ছিলেন। ১৯৭০ সালে তাঁর হাত ধরেই এই দেশে প্রথম লিকুইড ফুয়েল রকেট প্রযুক্তি আসে। সেই তাঁকেই কিনা অনাবশ্যক কারণে নির্যাতন এবং মারধর করল কেরালা পুলিশ! প্রাক্তন ইসরো বৈজ্ঞানিক ৭০ বছরের নাম্বি নারায়ণন সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে জানান যে তাঁকে বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অত্যাচার চলেছে তাঁর ওপর। তিনি বলেন যে, তাঁকে মানসিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছিল এবং মানসিক নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিলেন তিনি। নাম্বি নায়ারণনের করা এই অভিযোগের ভিত্তিতে কেরালা পুলিশের বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়ে দিল, নারায়ণনের উপর অকারণ নির্যাতন করা হয়েছিল। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেন, ‘নাম্বি নারায়ণকে অযথা গ্রেপ্তার করে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে। যেটা একদিক থেকে মানসিক নিষ্ঠুরতাও বটে।’ শীর্ষ আদালত এ বিষয়ে প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডিকে জৈনকে কেরালা পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।
নাম্বি নারায়ণন ইসরোর ক্রায়োজেনিকস বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২৪ বছর আগে, ১৯৯৪ সালে তাঁকে বিদেশের চরবৃত্তি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সে বছর নাম্বি এবং আরেক গবেষক ডি শশিকুমারণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গোপনীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ছিল, নাম্বি নায়ারণন ‘ফ্লাইট টেস্ট ডাটা’ কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে মালদ্বীপের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। উপগ্রহ উৎক্ষেপণের আগেই গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্য ফাঁস হওয়ার অভিযোগ উঠতেই নাম্বির বিরুদ্ধে মামলা করে কেরালা পুলিশ। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় ৫০ দিন তিনি কেরালার জেলে ছিলেন। অভিযোগ ওঠে সেসময় জেলে ওই গবেষকের উপর অহেতুক অকথ্য অত্যাচার করে কেরালা পুলিশ। ১৯৯৬ সালে কেরালা পুলিশের কাছ থেকে এই মামলাটি সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়। কিছুদিন পর সিবিআই জানিয়ে দেয় নাম্বি নারায়ণন নির্দোষ। তদন্তে প্রমাণ হয় যে ওই বৈজ্ঞানিকের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। মামলাটি এরপর সিবিআই বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও সিবিআই তদন্তে উঠে আসে যে, পুলিশ তদন্তের নামে কোনও কাজই করেনি এবং পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও বলা হয় কেরালা হাইকোর্টকে। ১৯৯৮ সালে শীর্ষ আদালত ওই বৈজ্ঞানিক সহ অন্যান্যদের ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রাজ্য সরকার আদালতের নির্দেশ অনুসারে ওই টাকা দেন নাম্বি নারায়ণকে। এরপরই যে পুলিশকর্মীরা তাঁর উপর অত্যাচার করেছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে হাই কোর্টে মামলা করেন নায়ারণন। তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে হাই কোর্ট। হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পালটা মামলা দায়ের করেন ইসরোর প্রাক্তন গবেষক। তাঁর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কারণ হিসাবে তিনি জানান কেরালা হাইকোর্ট পুলিশ অফিসার সিবে ম্যাথিউ, কে কে জোশুয়া এবং এস বিজয়নের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছিল না। তাঁর সেই মামলার ভিত্তিতে নতুন রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি, পুলিশ কর্তাদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বাধীন কমিটিও তৈরি করেছে সর্বোচ্চ আদালত।