দুর্গা পুজোর চারটে দিন হলো বাঙালির নিজস্ব ফ্যাশন শো। আলো ঝলমলে রাস্তা, ঠাকুর দেখার লম্বা লাইন, পাড়ার পুজো মণ্ডপ,-সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে র্যাোম্পের আলো। আর সেই আলোর নীচে সবাই শো-স্টপার। আর ঠিক একমাস বাকি পুজোর। ফ্যাশনিস্তারা ব্যস্ত এখন পুজোর কেনাকাটা করতে। তবে পুজোর শপিং করতে যাওয়ার আগে এবছরের শপিং ট্রেন্ড গুলো মাথায় আছে তো? না হলে কিন্তু পুজোর সাজের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ার তুমুল সম্ভাবনা।
কথা হচ্ছিলো পুনের ফ্যাশন স্টাইলিস্ট শ্রেয়া খাঁ-র সঙ্গে। শুধু পোশাক নয়, তার সঙ্গে মানানসই অ্যাকসেসরি ট্রেন্ড নিয়েও তিনি কিছু টিপস শেয়ার করলেন।
তবে তার আগে একটা ব্যাপার শ্রেয়া মনে করিয়ে দিলেন।‘যদি পুজোয় সত্যিই নজর কাড়তে চান, তবে একটু কমফর্ট জোন থেকে বেরোতে হবে’। কিরকম? ‘আসলে পুজো মানেই ট্রাডিশনাল পোশাক পরতে হবে এমনই একটা ধারণা সবাই পোষণ করেন। ট্রাডিশনাল পোশাক পরতেই পারেন। তবে পুজোর চার দিনই নয়। একদিন ট্রাডিশনাল পরলেন, বাকি দিনগুলো না হয় ফ্যাশন নিয়ে একটু এক্সপেরিমেন্ট করলেন। তাই কেনাকাটার সময় এই কথাটাই মাথায় রাখুন’।
পুজোর সময় ওয়েস্টার্ন পোশাক নৈব নৈব চ? পরলেও সকালের দিকে? এই যদি আপনার মনোভাব হয়, তবে আপনি ফ্যাশন সচেতনতায় খানিক পিছিয়ে। পুজোয় জমিয়ে ওয়েস্টার্ন পোশাকে সেজে উঠুন। শুধু দিনে নয়। রাতেও। ম্যাক্সি ড্রেস বা কাফতানে সহজেই যোগ হবে গ্ল্যামার কোশেন্ট। তবে সাধারণ ম্যাক্সি ড্রেস নয়। এখন ট্রেন্ড অ্যাসিমেট্রিক্যাল ম্যাক্সি ড্রেসের। ইনকা সভ্যতা থেকে অনুপ্রাণিত এই নয়া ফ্যাশন ট্রেন্ডটি শিফন, সিল্ক, বা নরম ক্রেপের ম্যাক্সি ড্রেস বাছুন উৎসবের রাতের জন্য। অর্থাৎ একটু ফ্লোয়ি ফ্যাব্রিকের পোশাক কিনুন।
আর কাফতান তো এই মুহূর্তে ফ্যাশনিস্তাদের হট ফেভারিট। সমস্ত শারীরিক গঠনেই এই পোশাক মানায়। তাই একটা কাফতান কুর্তি, টপ, বা ড্রেস আপনার এবারের শপিং লিস্টে থাকুক। দিনে, রাতে যখন ইচ্ছে পরা যায়। আসিমেট্রিক্যাল কাফতান, বা নীচের দিকে ফ্রিঞ্জ দেওয়া কাফতান আপনাকে দেবে একটা বোহোচিক লুক।
অল্প বয়সীরা ট্রাই করতে পারেন লিটল স্মক ড্রেস বা অফ শোল্ডার মিড লেংথ স্মক ড্রেস। সঙ্গে চাই যথাযথ মেকআপ, হেয়ার স্টাইল আর মানানসই অ্যাক্সেসরি। বোল্ড ফ্যাশন স্টেটমেন্টের জন্য আদর্শ।
ডাংরি কিন্তু ফ্যাশনে ফিরছে। স্কুল পড়ুয়া কিশোরী এমনকি সদ্য কলেজের তরুণীদের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। এখনও যদি আপনার সংগ্রহে এই পোশাকটি না থাকে তবে একটা কর্ডুরয় ডাংরি কিনে নিন এইবেলা। টিম আপ করুন ডিজাইনার শার্ট, শ্রাগ, বা জ্যাকেটের সঙ্গে। প্যান্ডেল হপিং-এর জন্য আদর্শ।
একটু গ্লসি, গ্লিটারি, স্পার্কলড বা সিকুইনড পোশাক পরতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পাছে ওভার দ্য টপ বদনাম জোটে- সেই ভয়ে পরতে পারেন না? নির্ভয়ে কিনে ফেলুন এমন একখানা পছন্দমতো পোশাক। এখন এটাই ট্রেন্ড। আর উৎসবের মরশুমে একটু ঝলমলে সাজলে ক্ষতি নেই মোটেই।
একটু লেয়ারড লুক বেশ কিছুদিন ধরে ফ্যাশনে ইন। তাই পুজোর শপিং লিস্টে থাকুক শ্রাগ, জ্যাকেট, লং জ্যাকেট, কেপ ইত্যাদি। এগুলো দিয়ে ইচ্ছে মতো স্টাইলাইজ করে লেয়ারড লুক ট্রাই করতে পারেন। আর সারা বছরই এগুলো কাজে লাগবে। তাই এইসময় কিনে নিন।
এই উৎসবে মরশুমে জমিয়ে প্রিন্ট পরুন। সেটা ওয়েস্টার্ন পোশাকও হতে পারে। আবার এথনিক পোশাক ও হতে পারে। এমনকি শাড়িও। জিওমেট্রিক প্রিন্টসের ট্রেন্ড এখন একটা স্মার্ট ও এজি অথচ ক্লাসি। ফ্লোরাল প্রিন্ট তো ফ্যাশনের দুনিয়ায় সব সময় ইন। তবে চিরাচরিত ফ্লোরাল প্রিন্ট নয়। বরং জবা, অপরাজিতা, রঙ্গন, জুঁই, পলাশের মতো দেশী ফুলের মোটিফ আপনার পোশাকে ফুটে উঠুক এই উৎসবে।
এবার আসি অ্যাকসেসরির কথায়। একটু জিওমেট্রিক প্যাটার্নের গয়না বাছুন। এখন সোনাতেও ট্র্যাডিশনাল ডিজাইনের পাশাপাশি এই ধরনের ডিজাইন পেয়ে যাবেন। আর রুপো আর কস্টিউম জুয়েলারির কথা তো ছেড়েই দিলাম। সেখানে অঢেল অপশন। অল্প বয়সীরা ট্রাই করতে পারেন টাসেলড জুয়েলারি। লেদার বা পালকের গয়নাও একটা অন্যরকম লুক তৈরি করতে সাহায্য করবে।
সাজ সম্পূর্ণ করতে জুতো খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে পুজোর সময় প্যান্ডেল হপিং ইত্যাদির কথা মাথায় রেখে বলবো স্টিলেটো নয়, বরং ব্লক হিলের জুতো কিনুন। সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যাবে।
যাদের বয়স কম তাঁরা বেছে নিতে পারেন একটু অন্য ধরনের ডিজাইনার স্নিকারস। ড্রেস, স্কার্ট, ডেনিম, যাই পরুন না কেন মানাবে। তবে এথনিক পোশাকের জন্য একটা আলাদা জুতো কিনে রাখাটাও বুদ্ধিমানের কাজ।
তবে ট্রেন্ড অনুযায়ী কেনাকাটা করলেই হলোনা। কোনদিন কেমন পোশাক পরবেন, কেমনভাবে স্টাইলাইজ করবেন, এসবও মাথায় রাখুন।
পুজোর প্রস্তুতিতে চোখ রাখুন এই বিভাগে। আগামী পর্বে থাকছে চোখের মেকআপ নিয়ে টিপস।