এবার আর আর নামীদামি ব্র্যারন্ডের পণ্য কিনতে যেতে হবে না ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলিতে। সেসব মিলবে পাড়ার রেশন দোকানেই। বহুদিন ধরেই রেশনে নামী ব্র্যাইন্ডের পণ্যসামগ্রী দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল রাজ্যের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই, রেশন ব্যবস্থার উন্নতিসাধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই পরিকল্পনারই বাস্তবায়ন হল আজ। অবশেষে রেশন দোকানের মাধ্যমে নামী ব্র্যান্ডের নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রির প্রকল্পটি আজ, বৃহস্পতিবার চালু হচ্ছে। এটি চালাতে সর্বভারতীয় একটি শপিং মল চেইন সংস্থার সঙ্গে খাদ্য দপ্তরের চুক্তি হয়েছে। জানা গেছে প্রথম পর্যায়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় প্রকল্পটি চালু হবে। তবে যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যের অন্য জেলাগুলিতেও এই প্রকল্পটি চালু করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী খাদ্য দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
খাদ্য দপ্তরের দাবি, রেশন দোকানে নামী ব্র্যান্ডের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ন্যূনতম বিক্রয়মূল্য (এমএসপি) থেকে ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত কম হবে। তবে পণ্য অনুযায়ী ছাড়ের পরিমাণ কম-বেশি হবে। এই পণ্যগুলি কেনার জন্য রেশন কার্ডের কোনও প্রয়োজন হবে না। কেন্দ্র ও রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প চালু হওয়ার পর বহু মানুষ ডিজিটাল রেশন কার্ড পাননি বা নেননি। তাঁরাও এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন।
আজ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় ছ’টি মডেল রেশন দোকানের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি চালু করা হচ্ছে। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, খাদ্য ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন। সল্টলেক, দমদম, বারাসত, ব্যারাকপুর, বনগাঁ ও বসিরহাটে যে ছ’টি মডেল রেশন দোকান চালু হচ্ছে, সেখানেও অনুষ্ঠান হবে। রেশন দোকান বলতে সাধারণত যা দেখা যায়, তার তুলনায় ঝাঁ চকচকে করা হয়েছে এই দোকানগুলিকে। ওই সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ছ’টি মডেল রেশন দোকান ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার অন্য রেশন দোকানগুলিতে অর্ডার দেওয়া হলেই পণ্য সরবরাহ করা হবে। আপাতত প্রায় চারশো ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করতে সংস্থা তৈরি রয়েছে। আগামী দিনে পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়বে। তেল, নুন, আটা, ময়দা, চিনি, বিস্কুট, টুথপেস্ট, সাবান, শ্যাম্পু, মশলা থেকে শুরু করে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। নিজস্ব প্রয়োজন ও এলাকার চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে ডিলাররা জিনিসের বরাত দিতে পারবেন। গরিব মানুষের কথা ভেবে বড় প্যাকেটের পাশাপাশি ছোট পাউচে সামগ্রী থাকবে। প্রতি ১৫ দিন অন্তর দাম নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করবে খাদ্য দপ্তর। কোন সামগ্রীর কত বিক্রয়মূল্য, রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের কমিশন কত, তা ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো থাকবে। চলতি আর্থিক বছরের মার্চ মাসের মধ্যে রাজ্যের প্রায় ২০ হাজার রেশন দোকানই এই প্রকল্পের আওতায় চলে আসবে বলে আশা করছে খাদ্য দপ্তর। সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সব জেলাতেই প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
এতদিন রেশন দোকানে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করত রাজ্য সরকারি সংস্থা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম। কিন্তু যে পণ্যগুলি সরবরাহ করা হতো, তা প্রায় সবই অনামী ব্র্যান্ডের হওয়ায় রেশন গ্রাহকদের কাছে তার কোনও চাহিদা ছিল না বলে ডিলারদের অভিযোগ। অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, বাম আমল থেকে ওই সব পণ্য জোর করে তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু ক্রেতারা নিতে না চাওয়ায় ডিলারদের আর্থিক ক্ষতি হতো। এবার সেই পরিস্থিতি বদলাবে বলে তাঁর আশা। আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নেওয়ার জন্য নিগমের কাছে তার টাকা পুরো আগাম জমা দিয়ে দিতে হতো। নতুন ব্যবস্থায় ১৫ দিনের ধারে বেসরকারি সংস্থাটি ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে মাল সরবরাহ করবে। ডিলাররাও ১৫ দিনের ধারের সুযোগ পাবেন। ফলে বিক্রি হওয়ার পর দাম মেটানোর সুযোগ থাকছে।
নতুন এই ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের কাছে কতটা আকর্ষণীয় হয়, সেটা এখন দেখার। তবে সাধারণ মানুষের কাছে কিছুটা কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি এই ব্যবস্থা চালু করার পিছনে সরকারের আরও একটি উদ্দেশ্য আছে। দীর্ঘদিন ধরে রেশন ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটররা কমিশন বাড়ানোর জন্য দাবি করে আসছেন। কিন্তু কমিশন বাড়াতে গেলে রাজ্য সরকারের উপর আর্থিক চাপ আরও বাড়বে। কারণ কেন্দ্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে, রেশন ডিলারদের কোনও বাড়তি কমিশন তারা দেবে না। তাই এই ব্যবস্থা চালু করে রেশন ডিলার এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের বিকল্প পথে আয় বৃদ্ধির ব্যবস্থাও করল রাজ্য সরকার।