কার্যত বোমা ফাটালেন রিজার্ভ ব্যঙ্কের প্রাক্তণ গভর্ণর রঘুরাম রাজন।একাধিক বড় মাপের ব্যাঙ্ক জালিয়াতদের একটি তালিকা তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং সংসদীয় দলের কাছে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কেঊ গা করেনি কোনও। এমন ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
এই নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কংগ্রেস।–সহ বিরোধীরা। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, ‘জালিয়াতদের সম্পর্কে জেনেও প্রধানমন্ত্রী কেন ব্যবস্থা নেননি?’ তাঁর দাবি, ‘তিনি ক্ষমতায় আসার সময় এনপিএ ছিল ২.৮৩ লক্ষ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের তালিকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে কমিটির এক সদস্য জানান, রাজন কোন সময় তালিকা দিয়েছিলেন তা জানতে চাওয়া হবে।
মোদী-শাহ জুটির কাছের লোক রঘুরাম রাজন। তাঁকে রিজার্ভ ব্যঙ্কের গভর্ণর পদে বসানোর সময় বিজেপি-র অনেক বড় নেতাই বিরোধীতা করেছিলেন। কিন্তু সেসব পাত্তা না দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যঙ্কের সর্বেসর্বা পদে বসিয়েছিলেন রাজনকে। সেই রঘুরামের মুখে মোদীর দপ্তরের বিরোধিতায় তাই আলাদা গুরুত্ব। রাজনের এমন মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। সোশ্যাল মিডিয়াতে বইছে সমালোচনার ঝড়।
রঘুরাম রাজন বলেন, ‘আমি গভর্নর থাকাকালীন বড়সড় আর্থিক প্রতারণা রুখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে একটি নজরদারি কমিটি গড়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সম্ভাব্য ‘হাই প্রোফাইল’প্রতারকদের তালিকা পাঠিয়ে তাদের মধ্যে অন্তত দু-একজনকে আটক করার পরামর্শও দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই তালিকা নিয়ে কী করা হল কিংবা আদৌ কিছু করা হল কি না, কিছুই জানতে পারিনি। আমার মনে হয় ওই তালিকাকে আপৎকালীন তৎপরতায় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিৎ ছিল।’ নীরব মোদি, মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়াদের নাম না করলেও রঘুরাম রাজনের ইঙ্গিত সেদিকেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজনের কথায়, ‘একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। দোষীরা ভয় পাবে কেন? এটা যে শুধু হতাশাজনক, তাই নয়, দুর্ভাগ্যজনকও বটে’।
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। কয়েকদিন আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া তাদের রিপোর্টে প্রকাশ করে নোট বাতিলের ৯৯.৩ শতাংশ পুরনো টাকাই ব্যঙ্কিং ব্যবস্থায় ফেরত এসেছে। মোদীর কালো টাকা উদ্ধারের গল্প যে নিছকই গালগল্প এই রিপোর্ট সেটা প্রমাণ করে দিয়েছিল। তারওপর নীরব মোদী, মেহুল চোকসি, বিজয় মালিয়াদের মতো একাধিক ঋণখেলাপিদের বিদেশে পালানোর ঘটনায় বিপাকে পড়ে যায় মোদী সরকার। তার ওপর এদিন রিজার্ভ ব্যঙ্কের প্রাক্তণ গভর্ণর রঘুরাম রাজনের এই মন্তব্যে কার্যত পাঁকে পড়েছে বিজেপি। কালো টাকা আর দূর্ণীতি নিয়ে মোদী সরকারের এখন ল্যাজেগগোবরে অবস্থা।
জানা গেছে, মুরলীমনোহর যোশীর নেতৃত্বাধীন সাংসদীয় কমিটি এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে রাজন লিখেছিলেন, ‘২০০৬-০৮ সালের মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি শক্তিশালী ছিল । পরিকাঠামো ও শক্তি ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প সময়মতো ও বাজেটের মধ্যেই শেষ হয়। সে সময় বিপুল পরিমাণ অনাদায়ী ঋণের ঘটনা ঘটেছিল’।
প্রসঙ্গত, ২০১৫-র এপ্রিলে একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে খবর বেরিয়েছিল, রাজন ঋণখেলাপিদের একটি তালিকা জমা দিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। কাদের নাম আছে সেখানে সেই তালিকাও প্রকাশিত হয়েছিল।যেমন, উইনসাম ডায়মণ্ড অ্যাণ্ড জুয়েলারি, তিওয়ারি গ্রুপ, জুম ডেভলপার্স, সূর্য বিনায়ক ইণ্ডাস্ট্রিজ, সূর্য ফার্মাসিউটিক্যালস ইত্যাদি। ঘটণা হ্ল, ওই সংবাদ প্রকাশের ২ বছর পরেও কেন্দ্রের তরফে কোনও হেলদোল নজরে পড়েনি।