আমডাঙার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বারুদের স্তুপ আর মাটির নীচে লুকানো বোমার ভান্ডার এখনও পুরোপুরি উদ্ধার করা যায়নি। রবিবারও সিপিএমের এক লোকাল কমিটির সদস্যের বাড়ির পিছনে একটি বাঁশবাগান থেকে বেশ কয়েক ড্রাম বোমা পাওয়া গিয়েছিল। এবার আমডাঙার বইছগাছি গ্রামের গণ্ডগোলের ঘটনায় ফের একজন তৃণমূলকর্মীর মৃত্যু হল। সাত্তার আলি মণ্ডল নামে ওই দলীয় কর্মী সিপিএমের হামলায় গুরুতর জখম হয়ে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন। সোমবার ভোররাতে ওই হাসপাতালেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় এলাকায় নতুন করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কারণ, সাত্তারসাহেবকে নিয়ে ২৮ আগস্টের গণ্ডগোলের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হল। তার মধ্যে তিনজনই তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী। শাসকদলের অভিযোগ, পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের লোভে সিপিএম এই গণহত্যা করল।
গত ২৯ আগস্ট আমডাঙার তারাবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এই পঞ্চায়েতটি ত্রিশঙ্কু হয়েছিল। তাই বোর্ড গঠন নিয়ে শাসকদলের সঙ্গে সিপিএমের টানাপোড়েন চলছিল। বোর্ড গঠনের আগের দিন অর্থাৎ ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় আমচকা গণ্ডগোল বাধে। তাতে তৃণমূলের দু’জন খুন হন। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম পরিকল্পিতভাবে ওইদিন হামলা করেছিল। বইছগাছি গ্রামের রাস্তার ওপারেই বড়গাছিয়া গ্রাম। সেখানেই বাড়ি তৃণমূল কর্মী সাত্তার আলি মণ্ডলের। তিনি বাড়ির সামনেই ছিলেন। সিপিএমের হামলাকারীরা তাঁকে লক্ষ্য করে প্রথমে বোমা মারে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর তাঁর সারা শরীরে তরোয়াল দিয়ে কোপানো হয়। মাথাতেও একাধিক কোপ মারা হয়েছিল। তারপর তাঁকে একটি বাঁশবাগানে ফেলে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল হামলাকারীরা। সারারাত নিখোঁজ থাকার পর, পরদিন সকালে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। গুরুতর জখম এবং সারারাত ধরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে, তাঁর শরীরিক অবস্থা একেবারে আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছিল। বারাসত হাসপাতাল থেকে তাঁকে আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শরীরে শতাধিক সেলাই পড়েছিল। গত দু’দিন ধরে তিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। সোমবার রাত আড়াইটে নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। গ্রামে মৃত্যুর খবর আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি, ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরাও।
এদিন বিকালে হাসপাতাল থেকে তৃণমূলকর্মীর মৃতদেহ নিয়ে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আমডাঙার বড়গাছিয়া গ্রামে যান। মৃতের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান এবং দলের তরফে পাশে থাকার আশ্বাসও দেন। তিনি বলেন, এটি একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যা। সিপিএম ১৫ দিন আগে থেকে এই গণহত্যার ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করেছিল। ওরা পরিকল্পিতভাবে বন্দুক ও বোমা নিয়ে হামলা করে। আমাদের সাত্তার আলি মণ্ডলকে বোমা মেরে, তরোয়াল দিয়ে তাঁর শরীর ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এই হামলার পিছনে বড় মাথা রয়েছে। আমরা চাই পুলিশ তাকে খুঁজে বের করে অবিলম্বে গ্রেফতার করুক। সিপিএমের সন্ত্রাসে উদ্বিগ্ন গ্রামবাসীদেরও এই একই দাবি।