ব্রিজ ভেঙে পড়েছে কলকাতার বুকে। আর আকাশ ভেঙে পড়েছে মহানগরের পুজো উদ্যোক্তাদের মাথায়। তাঁদের এখন একটাই চিন্তা, পুজোর সময় ভিড় হবে তো? দর্শনার্থী সমাগম ছাপিয়ে যাবে তো আগের সব রেকর্ডকে?
মহানগরীর আকাশে হঠাৎ করেই যেন দুর্যোগের ঘনঘটা। ভেঙে পড়েছে মাঝেরহাট ব্রিজ। ফলে কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণ শহরতলীর যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। যাওয়া-আসা চলছে ঘুরপথে। লাগছে অনেক সময়। ১৫ মিনিটের পথ পেরোতে দেড় ঘণ্টা কাবার হচ্ছে। এ তো গেল প্রত্যক্ষ সমস্যা। পরোক্ষ সমস্যাও কিছু কম নেই। পেট্রোল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ছাপিয়ে গেছে সব কিছুকে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। পকেটে টান পড়ছে মধ্যবিত্তের। পুজো উদ্যোক্তারা জানেন, ফাঁকা পকেটে আর যাই হোক আনন্দ হয় না। দুর্গা পুজোর আনন্দ তো নয়ই।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে টাকার দামে রেকর্ড পতন। প্রতি মুহূর্তে মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে। পাশাপাশি চোখ রাঙাচ্ছে নিম্ন চাপের বর্ষা। পুজোর ৪ দিন যদি আকাশ ভাসায় তাহলে তো বাইরে বেরনোই বন্ধ হয়ে যাবে! এই ভাবেই সমস্যার অক্টোপাস আঁকড়ে ধরেছে দুর্গা পুজো উদ্যোক্তাদের।
ব্রিজ কবে মাথা তুলবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। টাকার দামের পতনে কবে লাগাম পড়বে, আদৌ মোদী সরকার লাগাম পরাতে পারবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। আর জিনিসপত্রের দাম কবে নিয়ন্ত্রণে আসবে তা ঈশ্বরই জানেন। অন্যদিকে, দুর্গাপুজোর আর মাসখানেক বাকি। এর মধ্যে এসব মিটবে কিনা সেই চিন্তায় রাতের ঘুম ছুটেছে কলকাতার ডাকসাইটে পুজো কমিটিগুলির।
৪১ পল্লি পুজোর উদ্যোক্তা দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘পুলিশ কীভাবে পরিস্থিতি ম্যানেজ করবে, আমরা সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। একদিকে ডায়মন্ডহারবার রোড ধরে গাড়ি আসে, অন্যদিকে টালিগঞ্জ থেকে করুণাময়ী হয়ে ঠাকুরপুকুর ধরে গাড়ি যায়। এবার ডায়মন্ডহারবার রোড কার্যত অচল হয়ে গেল। তাই সবটুকু গাড়ির চাপ এসে পড়বে টালিগঞ্জ-ঠাকুরপুকুর মহাত্মা গান্ধী রোডের উপর। সেই চাপ হরিদেবপুরের পুজোগুলি কীভাবে সামলাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।’
চিন্তা আছে শারদীয়া পুরস্কার নিয়েও। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করার পর যদি দর্শক আর পুরস্কার দুইই যায়, তাহলে হাত কামড়ানো ছাড়া কিছু করার থাকবে না বলেই মনে করছেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের এখন শেষ ভরসা মুখ্যমন্ত্রী আর মা দূর্গা। বড়িশা ক্লাবের কর্তা সুদীপ পোল্লে বলেই ফেললেন ‘পুজোর জন্যও আমরা মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই ভরসা করে আছি। তিনি কী উদ্যোগ নেন, সেদিকেই তাকিয়ে আছি সবাই।’