সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সামান্য হলেও স্বস্তিতে আসামের এনআরসি থেকে বাদ পড়া নাগরিকেরা। এইমুহূর্তে যাঁদের অবস্থা, নিজভূমে পরবাস করার মতই। সদ্য প্রকাশিত আসামের এনআরসি বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় যাদের নাম বাদ পড়ে গিয়েছে, পুরনো দশটি নথির যেকোনও একটি দিয়েই তারা ফের নতুন করে নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। আজ এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একইসঙ্গে বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং বিচারপতি রোহিংটন ফলি নরিম্যানের বেঞ্চ জানিয়ে দিল, নতুন করে নাগরিকত্বের দাবির দিনক্ষণ এখন জানাচ্ছি না। পুরনো যে নথি সামনে রেখে নতুন করে নাগরিকত্বের দাবি করার আজ নির্দেশ দেওয়া হল, তা নিয়ে মূল আবেদনকারী আসাম পাবলিক ওয়ার্কস, কেন্দ্রীয় সরকার সহ এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিষ্ট্রার অব সিটিজেন) মামলায় যে ১৫ জন বাদী-বিবাদী রয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে বক্তব্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। তারপরই নতুন করে কবে থেকে বাদ পড়া বাসিন্দারা নাগরিকত্বের দাবি করতে পারবেন, তার দিনক্ষণ ঠিক হবে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। আসামে থাকা ৪০ লক্ষেরও বেশি নাগরিক কী করে বাদ পড়তে পারে? এর পিছনে কেন্দ্র এবং অসমের শাসকদল বিজেপির কোনও দূরভিসন্ধি রয়েছে বলে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনও বাঙালিকে আসাম থেকে তাড়ানো যাবে না বলে সরব হয় তৃণমূল। শীর্ষ আদালতে বাঙালির পক্ষে সরব হয় মামলার অন্যতম আবেদনকারী জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ফর বেঙ্গলি রিফিউজিস। অন্যদিকে, কোনওভাবেই অনুপ্রবেশকারী কাউকে আসামের মাটিতে জায়গা দেওয়া উচিত নয় বলে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল চড়ায় আসাম সম্মিলিত মহাসঙ্ঘ। আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য ৩ কোটি ২৯ লক্ষ ৯১ হাজার ৩৮৪ জন আবেদন করেছিলেন। যার মধ্যে চূড়ান্ত খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে ২ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৬৭৭জনের। অর্থাৎ আসামে থাকলেও বাদ পড়েছে ৪০ লক্ষ ৭ হাজার ৭০৭ জনের নাম। এমন পরিস্থিতিতে একপ্রকার চাপে পড়েই, যাদের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে তাদের ফের একবার নতুন করে সুযোগ দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করে কেন্দ্র। দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপালকে আজ বলতে শোনা যায়, যারা বাদ পড়ে গিয়েছেন, তাদের সুযোগ দেওয়া হোক। পুরনো নথি দিয়েই তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের দাবির সুযোগ দেওয়া হোক। যে ১৫ টি নথির যে কোনও একটি প্রমাণপত্র হিসেবে তালিকা তৈরি হয়ে আছে, সেগুলিই ফের রাখা যেতে পারে। যদিও তাঁর এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেননি বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। তিনি বলেন, মানবিক দিক অবশ্যই দেখতে হবে। তারই লক্ষ্যে চেষ্টা হচ্ছে। তবে কোনও একটি জায়গায় তো সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আদালতকেও ভারসাম্য রাখতে হবে। তাই যে ১৫টি নথির তালিকা দেওয়া আছে, তার মধ্যে থেকে এখন ১০টিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর মধ্যে থেকে যেকোনও একটি দেখালেই হবে। আসামের বাসিন্দা তথা দেশের নাগরিক প্রমাণের জন্য ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে ‘কাট অফ ডেট’ হিসেবে রাখা হয়েছে। ওই তারিখের আগে পাসপোর্ট, জমির রেকর্ড, জীবন বিমা, ব্যাঙ্ক অথবা ডাকঘরের অ্যাকাউন্ট, বার্থ সার্টিফিকেট, সরকারের দেওয়া কোনও লাইসেন্সের মতো দশটি নথির নতুন তালিকা আজই জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।