তামিলনাড়ুর বিজেপি সভানেত্রী তামিলসাই সুন্দরারাজনের সামনে মোদী সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলায় গ্রেপ্তার হলেন কানাডায় গবেষণারত তামিলনাড়ুর ছাত্রী। পরে অবশ্য তিনি জামিনে ছাড়া পান। ঘটনার সূত্রপাত সোমবার চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে। কানাডা থেকে চেন্নাই আসার পর তুতিকোরিনে যাওয়ার ডোমেস্টিক বিমানে ওঠেন কানাডায় গবেষণারত ছাত্রী লুইস সোফিয়া। একই বিমানেই ছিলেন সুন্দরারাজন। বিমানের মধ্যে বিজেপি নেত্রীর উদ্দেশ্যে ‘বিজেপি সরকার নিপাত যাক’ বলে স্লোগান দেন ২৮ বছরের সোফিয়া। একইসঙ্গে তিনি মোদী সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইস্তফা দাবি করেন। এই স্লোগান শুনেই ক্ষেপে যান বিজেপি সভানেত্রী।
বিমানটি তুতিকোরিনে পৌঁছানোর পরপরই দু’জনের মধ্যে প্রবল ঝগড়া শুরু হয়। সেই ঝগড়ার দৃশ্য অনেকে মোবাইলে রেকর্ড করেন। মোবাইলে রেকর্ড ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, বিমানবন্দরের মধ্যেই তারস্বরে চিৎকার করতে শুরু করেন বিজেপি নেত্রী, আর তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন বিমানবন্দরের কর্মী থেকে শুরু করে দায়িত্বরত পুলিস অফিসাররা। কিন্তু তিনি শান্ত হওয়ার বদলে আরও বেশি সুর চড়ান। ভিডিওটিতে আরও দেখা গিয়েছে, বিজেপির সভানেত্রী বলছেন, আপনি কেন এইভাবে স্লোগান দিচ্ছেন। তিনি বিমানবন্দরের কর্মী এবং বাকি যাত্রীদের সামনে চিল্লিয়ে বলতে থাকেন, কেউ আমার মুখের সামনে আমার দলকে ফ্যাসিস্ট বলবে, আর আমি চুপচাপ সহ্য করব? কিছু না বলে চুপচাপ চলে যাব? পুলিশ এবং দর্শকরা বলেন, মেয়েটি আপনাকে ভালো করে জানে না। ওঁর পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। কিন্তু বিজেপি নেত্রীকে থামানো যায়নি। তিনি ওই ছাত্রীকে ‘জঙ্গি’ তকমা দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
এই গ্রেফতারির পর পুলিশ ও এআইডিএমকে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হতে থাকে। গ্রেফতারির প্রতিবাদ করে ডিএমকে সভাপতি এম কে স্ট্যালিন বলেন, তামিলনাড়ু সরকার বাকস্বাধীনতা হরণ করছে। এআইডিএমকে নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে আক্রমণ শানিয়ে স্ট্যালিন বলেন, ভিন্নমত প্রকাশ করলেই যদি জেলে যেতে হয়, তাহলে সোফিয়ার দেওয়া স্লোগান তিনি নিজেও দিতে রাজি। নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে স্ট্যালিন বলেন, ‘তামিলনাড়ু সরকারের এই আচরণ গণতন্ত্র বিরোধী, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরোধী এবং অত্যন্ত নিন্দাজনক। সবাই যদি একই কথা বলে, তাহলে কতজনকে গ্রেফতার করা হবে? আমিও বলব, বিজেপি সরকার নিপাত যাক।’
একইসাথে সোশ্যাল সাইটে অনেকে বিজেপি সভানেত্রীর ক্ষমা দাবি করতে শুরু করেন। অবশ্য নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তামিলিসাই সুন্দরারাজন বলেন, কেন আমি ক্ষমা চাইব? ওই মহিলা যা করেছেন, তা পূর্বপরিকল্পিত বলে আমার মনে হয়। বিমানের মধ্যে বারবার স্লোগান দিতে শুরু করেন। আমি নিষেধ করা সত্ত্বেও তা কানে তোলেননি। কোনও নিরীহ মেয়ে ফ্যাসিস্ট শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না। একইসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, যেভাবে ওই মহিলা স্লোগান দিচ্ছিলেন, তাতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম।
গণিতশাস্ত্রের গবেষক ২৮ বছরের সোফিয়া এর আগে তুতিকোরিন স্টারলাইট কপার প্ল্যান্ট আন্দোলনেও অংশ নিয়েছিলেন। সোফিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন অভিনেতা তথা রাজনৈতিক নেতা কমল হাসানও। মাক্কাল নীধি মাইয়াম পার্টির নেতার মতে, যদি পাবলিক প্লেসে স্লোগান দেওয়া বা মতামত প্রকাশ করা অপরাধ হয়, তাহলে প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতা দোষী। সকলকে গ্রেপ্তার করা উচিত।
সোফিয়ার বাবা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক ডক্টর এ এ স্বামী বলেন, ‘আমার স্ত্রী মাধুরী ও আমি মেয়েকে নিতে চেন্নাই এয়ারপোর্ট গিয়েছিলাম। আমরা চেন্নাই থেকে ফিরছিলাম। আমরা তুতিকোরিনে নামার পরে সোফিয়া বিজেপি নেতাকে দেখে বলে ওঠে, “ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকার নিপাত যাক”।’ তিনি আরও বলেন যে, আমরা যখন টার্মিনালে পৌঁছোই তখন তামিলসাই এবং তাঁকে নিতে আসা জনা দশেক লোক আমাদের ঘিরে ধরে, আমার মেয়ের উদ্দেশে কটূক্তি করতে থাকে এবং অশালীন কথা বলতে থাকে। ওকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়।
সোফিয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ২৯০, ৫০৫ ধারা এবং তামিলনাড়ু সিটি পুলিশ আইনের ৭৫(১) ধারার আওতায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরে অবশ্য স্থানীয় একটি আদালত তাঁর জামিনের নির্দেশ দিয়েছে।