কলকাতার হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের নিজস্ব পাম্প থেকে তেল নিতে গাড়ি ঢুকিয়েছেন ট্যাক্সি চালক। ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ডে জ্বলজ্বল করছেঃ পেট্রোল ৮২.০৬ টাকা, ডিজেল ৭৪ টাকা। কপালের ঘাম মুছে পকেটে হাত ঢুকিয়ে টাকা বের করার ফাঁকে বিড়বিড় করে আপন মনেই বললেন, ‘আপ ইস ধান্দা ছোড়না পড়েগা’।
গত কয়েকদিন ধরেই পেট্রোল ডিজেলের দর উর্ধমুখী। এদিন ওই দর সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে। সঙ্গে পড়ছে টাকার দর। এই সাঁড়াশি চাপ প্রভাব পড়েছে কলকাতার ওই ট্যাক্সি চালকের মতো সাধারণ মানুষের মধ্যবিত্ত জীবনে।
আজ মঙ্গলবার, সকালে বাজার খুলতেই ১৬ পয়সা পড়ে ৭১.৩৭ টাকায় পৌঁছয় ডলার প্রতি টাকার দর। বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমারও কোনও লক্ষণ নেই। ব্যারেল পিছু ব্রেন্ট অশোধিত তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭৮.০৫ ডলার। অগস্টের ১৫ তারিখে যেখানে তেলের দাম ছিল ৭০.৭৬ ডলার। জ্বালানির তেলের দরে এই ক্রমবৃদ্ধির ফলে প্রভাব পড়ছে ভারতীয় মুদ্রার ওপরে।
এর ফলে সাধারণ জিনিসপত্রের দামও চড়তে শুরু করেছে। চাল, ডাল থেকে শুরু করে ভিন রাজ্য থেকে আনাজের দাম যেমন বাড়ার পাশাপাশি বাড়তে চলেছে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী-সহ হরেক মালের দাম। ডলারের নিরিখে টাকার দাম পড়তে থাকায় ক্রমশ জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। এমনকি জ্বালানী আমদানির খরচও বাড়ছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থাগুলি। ফলে যোগান বাড়লেও মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যাচ্ছে না। অন্ধ্র থেকে মাছের আমদানি কমতে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে যে কোনও সময় ট্রাক মালিকেরা ধর্মঘটে যেতে পারেন। সব মিলিয়ে টান পড়ছে মধ্যবিত্তের পকেটে।
আমাদের দেশের দৈনন্দিন তেলের চাহিদার ৮২ শতাংশ আমদানি করতে হয়। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেলের উত্স ইরানের থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করতে অত্যন্ত ভেবেচিন্তে পা ফেলতে হচ্ছে নয়া দিল্লিকে। ইরানের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পর দোটানায় ভারত। এক দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি, নভেম্বরের মধ্যে ইরান থেকে তেল আমদানি করা বন্ধ না করলে শাস্তির মুখে পড়তে পারে ভারত। অন্য দিকে ভারতের স্বার্থ বুঝে ইরানও চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।
বেশি ডলার খরচ করে তেল আমদানি করায় রাজকোষে ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ডলারের দাম ক্রমশ্য বৃদ্ধি পেলে আগামী দিনে এই ঘাটতি কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কেন্দ্র, সে নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার দরে পতন নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে বিরোধী দলগুলি। কেন্দ্র যদিও জানিয়েছে, টাকার এই পতন সাময়িক। বিশ্ববাজারে মন্দার কারণে টাকার পতন অব্যাহত। শীঘ্রই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছে অর্থমন্ত্রক। কিন্তু ধারাবাহিক টাকার পতনে এই আশ্বাসে চিড়ে ভিজবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই মুহূর্তে এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল টাকার মূল্য। তেল আমদানির খরচ বৃদ্ধি পেলে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা থাকছে। যার জেরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির ব্যাঘাতও ঘটতে পারে। জানা গেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সুদের হার বাড়ানোর পথে হাঁটতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যার জেরে শিল্প ক্ষেত্রে ঋণের খরচ বাড়বে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।