পেট্রোল-ডিজেলের দর লাগামহীন। এর সঙ্গে টাকার দর কমায় অবস্থা আরও জটিল। ডিজেলের তো বটেই, পেট্রোলের দামও সারা দেশে এতাবৎকালের সর্বোচ্চ হারে পৌঁছোল। এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই বোমা ফাটালেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। তাঁর অভিযোগ, রাফাল যুদ্ধবিমানের মতো পেট্রোল- ডিজেলের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিও মোদি সরকারের বড়সড় দুর্নীতি। কারণ, দেশের মানুষকে বঞ্চিত করে অন্য দেশকে কম দামে তেল বেচছে মোদীর সরকার।
এই নিয়ে কেন্দ্রকে একহাত নিয়েছেন তাঁদের ঘরের লোক সুব্রক্ষণ্যম স্বামীও। তাঁর মন্তব্য, ‘পেট্রোল–ডিজেলের এত দাম হওয়া উচিত নয়। সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। এর বেশি হলে তা শোষণের নামান্তর’। ২০১৪ সালের মে মাসে, মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে প্রতি লিটার পেট্রোলে উৎপাদন শুল্ক ছিল ৯.২ টাকা। বর্তমানে সেই শুল্ক বেড়ে হয়েছে ১৯.৪৮ টাকা। একই ভাবে ২০১৪ সালে প্রতি লিটার ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক ছিল ৩.৪৬ টাকা। এখন সেই শুল্কের পরিমাণ ১৫.৩৩ টাকা। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে এইপর্যন্ত কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক বেড়েছে ১২ বার।
গত বছর জুনে দৈনিক ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ চালু হওয়ার পর এক দিনে সবচেয়ে বড় মূল্যবৃদ্ধি ঘটল এবারই। রাজ্যের করের হিসেব মিলিয়ে কলকাতায় লিটার-প্রতি পেট্রোলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২.১২ টাকা, ডিজেলের ৭৪.০৫ টাকা। দিল্লিতে পেট্রোলের দাম লিটারে ৭৯.১৫ টাকা, ডিজেলের ৭১.১৫ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম মুম্বইয়ে। পেট্রোল ৮৬.৫৬ টাকা।
টাকার দর নামাতেও রেকর্ড হয়েছে। সোমবার বিকেলে একটা সময় ডলার–প্রতি দর চলে যায় ৭১.১০ টাকায়। যা সাধারণ মানুষের উদ্বেগের জন্য যথেষ্ট।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কামান দাগলেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা। সুরজেওয়ালা বলেন, ‘সম্প্রতি তথ্যের অধিকার আইনে করা একটি আবেদনের জবাবে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক জানিয়েছে, সরকার বিশ্বের ১৫টি দেশে লিটার–প্রতি মাত্র ৩৪ টাকা দরে পেট্রোল ও ২৯টি দেশকে ৩৬ টাকা দরে ডিজেল বিক্রি করছে। সেই তালিকায় প্রতিবেশী ছাড়াও রয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইজরায়েলের মতো দেশগুলিও’। উল্লেখ্য, জ্বালানির বেশির ভাগটাই আমদানি করতে হয় ভারতকে। দেশে উৎপাদিত বা আমদানি-করা অশোধিত তেল শোধিত হয় এ দেশের শোধনাগারে। তার পর কিছুটা অংশ অন্য দেশকে বিক্রি করা হয়।
সুরজেওয়ালার আরও অভিযোগ, দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে সরকার। জনতার পিঠে ছুরি মারছে। জনতার পকেট কেটে ১১ লক্ষ কোটির বেশি টাকা ‘লুঠ’ করেছে মোদি সরকার। অবিলম্বে পেট্রোল ও ডিজেলকেও জিএসটি-র আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
কংগ্রেসের তোলা অভিযোগের সাফাই দিয়েছেন পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তাঁর কথায়, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের মূল্যবৃদ্ধি আর টাকার দাম কমা-এই দুয়ের প্রভাবে দেশের বাজারে দাম বাড়ছে তেলের। আন্তর্জাতিক বাজারে হালে দাম বেড়েছে, এটা ঘটনা। আমেরিকার অবরোধের জেরে ইরান থেকে সরবরাহ কমার ভয়ও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা এবং ওপেক-ভুক্ত দেশগুলি সরবরাহ বাড়ানোয় সোমবার কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। তবে বিপদের কথা এটাও, টাকার দাম কমছে। ৩১ আগস্ট একবার ডলার–পিছু দর ৭১ টাকায় পৌঁছেছিল। এদিন সেটাও ছাপিয়ে গেল।