বাংলা চিরকালই কেন্দ্রের বঞ্চনার শিকার। বিজেপি সরকারের আমলে, সেই বঞ্চনার পরিমাণ বেড়েছে বৈ কমেনি। সদ্য ঘটা নোটবন্দী এবং জি.এস.টি ইস্যুতে আরুও একবার ধাক্কা খেলো বাংলা; এইবার তার শিকার বাংলার স্বনামধন্য তাঁত শিল্প। রাজ্যের ক্ষুদ্র এবং ক্ষুদ্র কুটির শিল্প দফতরের তরফ থেকে এমনটাই দাবি করা হলো। সদ্য বাংলার তাঁতের হাঁটের ১২ তম বর্ষ শুরু হয়েছে বিধাননগরে, সেন্ট্রাল পার্ক ময়দানে। আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই মেলা বিধাননগরে চলবে। মেলার উদ্বোধনে দফতরের আধিকারিকরা জানান, ‘বাম জমানাতে রাজ্যের তাঁত শিল্পকে কার্যত মেরে ফেলা হয়েছিল। মমতা বন্দোপাধ্যায় এসে এই শিল্পে খানিকটা হলেও জোয়ার নিয়ে এসেছেন। তাঁতিসাথী প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে রাজ্যের তাঁত শিল্পীদের বর্তমানে সাহায্য করা হচ্ছে। তাদের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি নানাভাবে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও রাজ্যের তাঁত শিল্প রাজ্যের যে সব জেলাতে ছড়িয়ে রয়েছে, সেই সব জায়গার কাঁচা রাস্তাকে পাকা রাস্তায় পরিণত করা হচ্ছে দফতরের তরফ থেকে। এই ভাবে সারা রাজ্যে এখনও প্রায় ২৫ কি.মি. রাস্তা গড়ে তোলার কাজ শেষ হয়েছে।’ জানা গিয়েছে ওই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে ৪৫ হাজার তাঁতিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে; ১ লক্ষ নতুন তাঁত সরবরাহ করা হয়েছে। ৯৪টি গুচ্ছ প্রকল্প করা হয়েছে। ৫ হাজার ৮৬০ জন সহশিল্পীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রাস্তা তৈরীর কাজের জন্য মোট ১৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। একইসাথে যে সকল শিল্পীরা ১৩ থেকে ১৮ শতাংশ হারে সুদ নিচ্ছে, তাদেরকে ৬ শতাংশ করে সুদে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলার তাঁত শিল্পকে বিদেশের বাজারে পৌঁছে দেওয়ার পর থেকেই তন্তুজ থেকে শুরু করে রেশম শিল্প, বঙ্গশ্রী, মঞ্জুষা লাভের মুখ দেখেছে। জানা গিয়েছে, তন্তুজ গত বছরে ১০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা লাভ করেছে। তার সঙ্গেই রেশম শিল্পে ৩ কোটি, বঙ্গশ্রীতে ৩ কোটি ৩৯ লক্ষ এবং মঞ্জুষাতে ৪ কোটি টাকারও বেশি লাভ হয়েছে। তবে এবারের তাঁতের হাঁটে তন্তুজ-এর পক্ষ থেকে ৫টি নতুন ডিজাইন নিয়ে আসা হয়েছে। সেগুলি হল- অপরাজিতা, শঙ্খবেলা, অনন্যা, চারুলতা ও আলোছায়া। তার সঙ্গেই এইবারের মেলাতে ১০৬ টাকা থেকে শুরু করে তন্তুজে মিলছে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূল্যের শাড়ি। তাঁত শিল্পীদের উৎপাদিত জিনিস সরাসরি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার লক্ষ্যেই রাজ্যের পক্ষ থেকে এই তাঁতের হাটের আয়োজন করা হয়। তবে এই হাটেও ২০১৪ সালের আগে, লাভের মুখ দেখা যেত না, কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে নানা ধরণের প্রকল্পের ফলে, এই হাটে নতুনত্বের ছোঁয়া লাগে। ফলে মানুষের এখান থেকে কেনাকাটা করার উৎসাহ বাড়তে থাকে।
দফতরের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে ২০১৪ সালে এই হাটে মোট বিক্রির পরিমাণ ১ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা; ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি। আবার ২০১৬-১৭ সালে তা দাঁড়ায় যথাক্রমে ১ কোটি ৮১ লক্ষ এবং ২ কোটি ৪২ লক্ষ। এই চলতি বছরে, মেলায় প্রায় আড়াই কোটি টাকার ব্যবসার মুখ দেখতে চলেছে রাজ্যের এই তাঁতের হাট; যার কারণে যথেষ্ট আশাবাদী বাংলার তাঁতশিল্পী তথা, গোটা রাজ্য। এইবারে মোট ২৭০টির মত স্টল রয়েছে হাটে। কেন্দ্রের বঞ্চনার পরেও রাজ্য সরকার যেইভাবে তাঁতিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। জি.এস.টি ইস্যুকে প্রায় বুড়ো আঙুল দেখিয়েই, এই বাংলার বুকে চলা তাঁতের হাটে, তাদের হাতের জাদুস্পর্শ দিয়ে অভিনবত্বের পসরা সাজালেন তাঁতিরা এবং তাঁতিদের পাশে থেকে সেই পথকেই আরও মসৃণ করে দিল ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প দফতর তথা রাজ্য সরকার।