উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা এলাকার বাড়ি-বাড়িতে কান্নার রোল। অধিকাংশ পুরুষ ঘরছাড়া। কালো পিচের রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বোমার সুতলি আর গুলির খোল। মাটির দেওয়ালে টাটকা রক্তের দাগ। রাত পোহালেও সিপিএমের হামলার স্মৃতি এলাকার মানুষের মণে এখনও টাটকা।
বুধবার আমডাঙার তাড়াবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের কথা ছিল। তাই বোর্ড গঠন যাতে শান্তিপূর্ণ হয় তার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে বারবার আবেদন করা হয়েছিল যুযুধান সব দলের কাছেই। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯ টি আসনের মধ্যে ৯ টি আসনে তৃণমূল জিতেছে। সিপিআই(এম) ৭ টি, বিজেপি, কংগ্রেস এবং নির্দল একটি করে আসন জিতেছে। এদিন কে বোর্ড গঠন করবে তাই নিয়েই মরিচা, বোদাই, তাড়াবেড়িয়ায় শুরু হয় সঙ্ঘর্ষ। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় তাড়াবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা।
বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে অশান্তির আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু সিপিএমের হাতে যে এই পরিমাণ বোমা-গুলি আছে তা ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি আমডাঙার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, সিপিএমের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা যেভাবে মুড়ি মুড়কির মতো বোমা বৃষ্টি করেছে তাড়াবেড়িয়ায়, স্থানীয় তৃণমূল সদস্যেরা বুঝে উঠতে পারেনি ব্যাপারটা ঠিক কি হচ্ছে। আতঙ্কিত মহিলার বলছেন, শুধু বোমাই পড়েছে হাজারখানেক। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চলে আক্রমণ। ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে ৩ জনের। পুলিশ জানায়, নিহতদের নাম নাসির হালদার (৩৩), কুদ্দুস গনি (৪৬), মোজাফ্ফর আহমেদ (৪০)। প্রথম দু’জন তৃণমূল কর্মী। অন্য জন সিপিএমের। সংঘর্ষে জখম দু’পক্ষের দশ জন বারাসত জেলা হাসপাতাল ও আরজিকরে ভর্তি। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান- সহ দশ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এই সঙ্ঘর্ষ নিয়ে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘যাদের নিজেদের প্রতি বিশ্বাস নেই তারাই খুন,জখমের রাজনীতি করে। অনেকে খুন হয়েছে। এই খুন সন্ত্রাসে রাজনীতির একটা নতুন মডেল হয়ে উঠছে। বিরোধীরা বাইরে থেকে লোক এনে অশান্তি সৃষ্টি করছে। এই রাজনীতি প্রতিরোধ করতে গিয়ে বহু তৃণমূল কর্মীর প্রাণ যাচ্ছে’। অন্য দিকে, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘দুষ্কৃতী-পুলিশ-তৃণমূল মিলে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত করার জন্য সরকারের মদতে সন্ত্রাস চলছে’।
আমডাঙায় তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর বোমা, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। নৌকোয় বস্তা-ভর্তি বোমা ও মশলা উদ্ধার হয়। আইজি দক্ষিণবঙ্গ নীরজ সিংহ বলেন, ‘এলাকায় কিছু বোমা তৈরি হয়েছিল’। তাই বলে এত অস্ত্রশস্ত্র মজুত হল, আঁচ করতে পারল না পুলিশ? উঠছে প্রশ্ন।
ঘটনার পর পুলিশ, র্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে এলাকা। স্থলপথের পাশাপাশি জলপথেও চলছে পুলিশি টহল। নতুন করে যাতে আর অশান্তি না ছড়ায় তার জন্য প্রস্তুত প্রশাসন। পাশাপাশি অনির্দিষ্টিকালের জন্য স্থগিত তাড়াবেরিয়া, বোদাই, মরিচায় বোর্ড গঠন।