পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মালদহের কংগ্রেস এমপি মৌসম বেনজির নুর।দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভেও শামিল হয়েছিলেন তিনি। তবে, পঞ্চায়েত ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই সুর বদলে ফেলেছেন তিনি।এখন বোর্ড গঠনে তৃণমূলের হাত ধরার পক্ষে সওয়াল করছেন মৌসম।কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করে রাজ্যে তৃণমূলের জোট বাঁধার কথা বলেছেন। এদিন এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনে বামেদের বাদ দিয়ে শুধু তৃণমূলের সঙ্গে জোট গঠনের কথা বললেন মৌসম। তাঁর মতে, বিজেপি দেশের প্রধান শত্রু। এদের আটকাতে হলে তৃণমূলের পাশে দাঁড়াতে হবে।
তবে মৌসমের এই মন্তব্যের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস বা এআইসিসি’র কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। যদিও পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন নিয়ে মৌসমের এই কৌশলকে স্বাগত জানিয়েছে তৃণমূল।
গত বিধানসভা নির্বাচনে মালদহে সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতা করে কংগ্রেস। যার সুবাদে ওই জেলায় একটি আসনও দখল করতে পারেনি তৃণমূল। ভোটে না জিততে পারলেও দল ভাঙিয়ে মালদহে কংগ্রেসকে বস্তুত অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দেয় তৃণমূল। এই অবস্থায় বিজেপি’র বিরুদ্ধে বামেদের বাদ দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ার যে তত্ত্ব মৌসম দিয়েছেন, তাতে স্বভাবতই বিড়ম্বনায় রাজ্য কংগ্রেস। কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, ‘জোট গড়া বা না গড়ার বিষয়টি দলের নীতি নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত। সেটি এআইসিসি নির্ধারণ করে। সেখানে রাজ্য স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ার বিষয়ে এখনও কোনও নির্দেশ পাইনি। তাই মৌসম যা বলেছেন, তা তাঁর নিজের বক্তব্য। এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না’। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী প্রায় একই সুরে তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যে তৃণমূল মালদহে গোটা কংগ্রেসকে বিপন্ন করে তুলেছে, তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর কথা কী করে বললেন মৌসম, তা তিনিই বলতে পারবেন’। মৌসমের বক্তব্য নিয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আরও আগে এই অবস্থান নেওয়া যেত। মালদহে বিজেপিকে আটকাতে ত্রিশঙ্কু বোর্ডে কংগ্রেস যদি তৃণমূলকে সমর্থন জানায়, তাহলে স্বাগত’।
উল্লেখ্য, গনিখান চৌধুরীর মালদহে এতদিন শেষ কথা ছিল কংগ্রেস। কিন্তু এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে তাদের। ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জিততে পেরেছে তারা। তৃণমূল কংগ্রস দখল করেছে ৫১টি গ্রাম পঞ্চায়েত। বিজেপি জেতে ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ৪৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হয়।
এখন এই ৪৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কংগ্রেস তৃণমূলকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন মৌসম। বিজেপিকে রুখতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ফলে ত্রিশঙ্কু গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে কংগ্রেস বা তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা প্রবল। বিজেপি এই পঞ্চায়েতগুলিতে দাঁত ফোটাতে পারবে না। আর সিপিএম তথা বামফ্রন্টের অস্তিত্বও এই জেলায় বিলুপ্ত।