ভারতীয় ক্রিকেটমহলে যে সব বাঙালি ক্রিকেটাররা দাগ রাখতে পেরেছেন, গোপাল বসু তাঁদের অন্যমত। তাঁর মৃত্যুতে স্বভাবতই শোকের ছায়া বাংলার ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যে।
পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন থেকে সরে আসার পরেও কখনও ক্রিকেটকে নিজের থেকে আলাদা করেননি তিনি৷ নির্বাচক থেকে কোচিং সবকিছুর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন অঙ্গাঙ্গীভাবে। কোচের দায়িত্ব যেমন সামলেছেন, তেমনি নিজের অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত কোচিং করাতেন তিনি৷ তাঁর ক্রিকেট মানেই সঠিক ব্যকরণ মেনে নিখুঁত ক্রিকেট।
কয়েকদিন আগেই স্ত্রীকে নিয়ে ছেলের কাছে বার্মিংহ্যামে ঘুরতে গিয়েছিলেন৷ সেখানেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ বার্ধক্যজনিত রোগে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন৷ কিডনি এবং হাঁপানির সমস্যাও ছিল। তার জেরেই তিনদিন স্থানীয় হাসপাতালে কাটানোর পরে রবিবার রাখীর সকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ৭২ বছরের প্রবীন গোপাল বসু।
গোপাল বসুর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি টুইট বার্তায় লিখেছেন, ‘প্রাক্তণ ভারতীয় ক্রিকেটার এবং বাংলার তারকা খেলোয়াড় এবং অধিনায়কের মৃত্যুতে আমি শোকস্তব্ধ। তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের প্রতি আমার সমবেদনা।’ এই মুহূর্তে যারা দাপিয়ে বাংলা ক্রিকেট খেলছেন তাঁদের অনেকেরই ক্রিকেটে হাতেখড়ি গোপাল বসুর কাছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, লক্ষ্মীরতন শুক্লা, রণদেব বসু কে নয়! লক্ষ্মীরতন শুক্লা তাই গোপাল বসুর হঠাৎ প্রয়াণে ভারাক্রান্ত৷ বলেছেন, ‘বাবাকে হারালাম। উনি না থাকলে আমার ভারতীয় দলে খেলা হত না ৷ ক্রিকেট যতটুটু শিখেছি বা জেনেছি সবটাই ওনার থেকে৷’ অশোক মালহোত্রাও একইভাবে শোকস্তব্ধ ৷ তিনি বলেন, ‘উনি বাংলার ক্রিকেট কিংবদন্তী ছিলেন৷ এমন জেন্টেলম্যান ক্রিকেটার বাংলা ক্রিকেটে আর হয়নি৷’
১৯৭৪-এ ভারতের হয়ে অভিষেক ম্যাচ খেলেন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলার অধিনায়ক পদের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার দাপট মনে রাখবে ক্রিকেটপ্রেমীরা। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সুনীল গাভাস্করের সঙ্গে ১৯৪ রানের পার্টনারশিপ চোখ টেনেছিল নির্বাচকদের। অথচ আর ডাক পাননি। বাঙালি বলেই উপেক্ষিত তিনি- এটাই মনে করতেন বহু মানুষই। এরপরেই ১৯৭৪-এ ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের জার্সিতে কেরিয়ারের একমাত্র ওয়ান-ডে ম্যাচ।ওয়ান ডে তেও তারপর উপেক্ষিত থেকে গিয়েছেন গোপাল।
বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি। কখনও বোলিং অ্যাকশান নিয়ে বিতর্ক তো কখনও অকারণ দল থেকে ছাঁটাই, শিরোনাম হয়েছেন বারবার।
বাংলার ক্রিকেট টিমের জার্সি গায়ে তাঁর অবদান মনে রাখবে আপামর বাঙালি। তাঁর প্রয়াণে বাংলা ক্রিকেট মহলে শোকের ছায়া।