পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন শুরু হতেই জেলায় জেলায় হামলা শুরু হয়ে গেল বিজেপি–র। শনিবার উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরে বোর্ড গঠন ঘিরে সঙ্ঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে একজনের। জখম ১০ জন। মালদার রতুয়ার তৃণমূল বোর্ড গড়ায় বিজেপি–র বিরুদ্ধে ঝামেলা বাঁধানোর অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপি’র বিরুদ্ধে। অন্যদিকে নদিয়ার ভীমপুরের বাগবেড়িয়া পঞ্চায়েতের সামনে এদিন তুমুল বোমাবাজি করে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বীরভূমের সদাইপুরে তরুগড়াহাট গ্রামে বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন আফসার হোসেন নামে এক তৃণমূল সমর্থক।
ইসলামপুরের পণ্ডপোঁতা–১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচিত তৃণমূল সদস্য মহম্মদ মুজফ্ফর পয়লা আগস্ট থেকে গুম হয়ে আছেন। এই ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত পণ্ডপোঁতা–১ নম্বর পঞ্চায়েত। পরিস্থিতি আঁচ করে শনিবার বোর্ড গঠন মুলতুবি রাখা হয়েছিল। কিন্তু সে সব না জানায় সকাল থেকেই অনেকে পঞ্চায়েতে ভিড় করে। সেখানে আচমকাই দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়।
এক সময় বোমাবাজি, গুলি, লাঠি সবই চলতে শুরু করে। ঘটনায় লাল মহম্মদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। জখম হয়েছেন উভয় পক্ষের প্রায় ১০ জন। সকলেই ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি। পণ্ডিতপোঁতা–১ পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৬ ও নির্দল ৫টি আসন দখল করে। নির্দলরাও পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূল বিধায়ক কানাইলাল আগরওয়াল জানান, এখন সবাই তৃণমূলের। ফলে বোর্ড গঠন নিয়ে সমস্যা থাকার কথা নয়। তারপরও উত্তেজনা থাকায় আমরা বোর্ড গঠন মুলতুবি রাখতে বলি। কিন্তু তা সত্ত্বেও যা হল সেটা দুঃখজনক।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নির্দলরা তৃণমূলে যোগ দিলেও ইচ্ছে ছিল ওরাই বোর্ড গঠন করবে। তাই তৃণমূলের মুজফ্ফরকে নিয়ে গা ঢাকা দিয়ে আছে সবাই। টাউন তৃণমূল সভাপতি গঙ্গেশ দে সরকার জানান, মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল গুলি–বোমা চালায় না। কেউ বাইরে থেকে ঢুকে দলের বদনাম করার জন্য এমন সব পরিস্থিতি তৈরি করছে।’ বিধায়ক কানাইলালও জানিয়েছেন, পুলিসকে বলা হয়েছে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে।
রতুয়া–২ ব্লকের পুখুরিয়া থানার আড়াইডাঙা অঞ্চলের নেস্তা গ্রামে তৃণমূলের ৭ নির্বাচিত সদস্য কংগ্রেসের ৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গঠন করে শুক্রবার। এতেই বিজেপি’র নির্বাচিত ৭ জন ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। অন্যদিকে পাল্টা হামলার অভিযোগও তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপি সদস্য সুমিত মাঝির অভিযোগ, প্ৰধান গঠনের বিরুদ্ধে আমি একটি অভিযোগ করেছিলাম তারপর সেই রাতেই হামলা দুষ্কৃতীদের। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতা তাপস চৌধুরি সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। বরং বিজেপিই বারেবারে আক্রমণের পথ বেছে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
পঞ্চায়েত রায় ঘোষণার পর বীরভূমের সদাইপুরের তৃণমূলের কর্মী–সমর্থকরা শুক্রবার বিকেলে বিজয় মিছিল বের করেছিলেন। মিছিল শেষে তাঁদের ওপর বিজেপি এবং সিপিএম কর্মীরা বোমাবাজি করে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনগুলিতে পুনর্নিবাচনের দাবি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী–সমর্থকরা রীতিমতো আনন্দে মেতে ওঠেন। তাঁরা বিকেলে গ্রামে বিজয় মিছিল বের করেন। মিছিল শেষ হওয়ার পর সন্ধেয় বেশ কিছু তৃণমূল–সমর্থক গ্রামের একটি পুকুরে হাত–পা ধুতে নামেন। বোমার আঘাতে জখম তৃণমূল সমর্থক আফসার হোসেন সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বেডে শুয়ে জখম তৃণমূল সমর্থক আফসার হোসেন জানান, তিনি একজন পুলিসকর্মী। সক্রিয়ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। শুক্রবার বিজয় মিছিলের পর গ্রামের কয়েকজন তৃণমূল সমর্থক বন্ধুর সঙ্গে তিনি একটি পুকুরে স্নান করতে নামেন। দুষ্কৃতীরা তাঁদের বাধা দেয়। বচসা চলার সময় হঠাৎ ওই দুষ্কৃতীরা তাঁদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি শুরু করে। বোমায় জখম হন তিনি। আফসারের অভিযোগ, ‘ওই দুষ্কৃতীরা একটি খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত, তাই এই ঘটনায় তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কিত।’
(সংগৃহীত)