বাংলার তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান। উত্তর ২৪ পরগনার উত্তর প্রান্তের শেষ ভাগে হালিশহরের অবস্থান। কথিত আছে হাভেলি শহর থেকে অপভ্রংশ হয়ে হালিশহর নামটি এসেছে। সময়ের অভিঘাত এই হাভেলিগুলি সইতে পারেনি। অবশেষ নেই আজ আর। গুটিকয়েক মন্দির আজও আছে। বাকি সময়ের সমুদ্রে বিলীন। এই শহরের ইতিহাস সুপ্রাচীন। মুঘল সাম্রাজ্যের থেকেও অনেক প্রাচীন। যদি আপনি একটু পুরোনো গন্ধ মাখা জায়গায় যেতে ভালোবাসেন তা হলে রবিবাসরীয় ভ্রমণে ঘুরে আসতেই পারেন। সকাল সকাল শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরুন- ৪০ কিমি রাস্তা। পৌঁছে যান হালিশহর।
স্টেশনে নেমে হালকা ব্রেকফাস্ট করে নিন। তারপর মন্দির। বারান্দা গলির শিব মন্দির। এই মন্দির চত্ত্বরে সাকুল্যে ৪টি মন্দির। যার মধ্যে রাজ্য সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ সংস্কার করেছেন ২টি। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে রক্ষনাবেক্ষনের বড়ই অভাব। এই বিষয়ে প্রশাসন আর একটু সজাগ হলে ভালো হয়।
এখানে মূল আকর্ষণ প্রধান ফটকের বাঁ দিকে অবস্থিত নন্দকিশোর মন্দির। ১৭৪৩ সালে স্থানীয় জমিদার মদনগোপাল রায় এই মন্দিরটি স্থাপনা করেন। অদ্ভুত সুন্দর টেরাকোটা দিয়ে সাজানো এই মন্দিরটি।
রামায়নের যুদ্ধের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে এখানে। রাম ও রাবণ এর সৈন্য দলের মাঝে এক বিশালাকায় গরুড় বিরাজমান। এ ছাড়াও আছে রাজসভা, যুদ্ধক্ষেত্র, অশ্ব, রথ, পালকি, ইত্যাদি। এর ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে আর একটি মন্দির যার মেঝে সম্পূর্ণ টেরাকোটা দিয়ে তৈরি।
এর পর চলে যান ক্রেগ পার্ক। হুগলি নদীর তীরে। অপূর্ব শোভা। নদীর উল্টো দিকে সাহাগঞ্জ ডানলপ কারখানা। কিছুটা সময় এখানে কাটাতে ভালোই লাগবে।
ক্রেগ পার্ক থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথে রামপ্রসাদ সেন-এর ভিটে। পথে পড়বে একটি জোড়া শিব মন্দির। রামপ্রসাদ সম্বন্ধে আলাদা করে বলার বোধহয় কিছু নেই। বাঙালির কাছে এই নামটি যথেষ্ট রকম পরিচিত এবং পূজিত।
এর পর রথতলা মন্দির(শ্রীকৃষ্ণ জীউ মন্দির)- এই মন্দিরটি হালিশহরের শ্রেষ্ঠ দ্রষ্টব্য। মেইন রোড এ এসে ৮৫ নম্বর বাস ধরে বাগ মোড়। ওখান থেকে হাঁটা পথে রথতলা মন্দির। স্থানীয় ও বাইরের পুণ্যার্থীদের প্রচুর ভিড়। ফটো তোলা যায়, তবে গেটের বাইরে থেকে। এই মন্দিরটি ১৭৮৫ সালে নিমাইচরণ ও গৌরচরণ মল্লিক স্থাপনা করেন। আটচালা মন্দির, ৬০ ফুট উচ্চতা – প্রস্ফুটিত পদ্মের আকার মন্দিরের চূড়ায়। মন্দিরের বাইরে একটি দোলমঞ্চ। এই মন্দিরের মুখ্য উৎসব রথযাত্রা।
ভ্রমণ শেষ। ২৭ নম্বর বাস ধরে কাঁচড়াপাড়া স্টেশন। ওখান থেকে শিয়ালদাগামী ট্রেন।