বর্ষাকালটা আমাদের সবাইকেই পেটের অসুখ থেকে সাবধান থাকতে হয়। আর বাড়ির ক্ষুদে সদস্যদের ক্ষেত্রে তো আরও একটু বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ ডায়েরিয়া বা আমাশার সমস্যায় ছোটদেরই এই সময় বেশি ভুগতে হয়।
প্রথমেই জেনে নেওয়া ভালো এই রোগের লক্ষণগুলি সম্পর্কে। দিনে তিনবারের বেশি জলীয় মলত্যাগ হলে ডায়েরিয়া বা আমাশা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর মলের সঙ্গে যদি রক্তক্ষরণ হয়, তবে তাকে আমরা রক্ত-আমাশা বা ডিসেন্ট্রি বলি।
এবার আসা যাক ডায়েরিয়ার কারণ সম্পর্কে। পেটের সঙ্ক্রমণ থেকে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। আর এই পেটের অসুখ নানা কারণে হতে পারে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়ে নোংরা জল জমে চারদিকে। এই জমা জলকে রোগের আঁতুড়ঘর বলা যায়। পরিচ্ছন্নতার অভাবও পেটের অসুখের অন্যতম কারণ। মাছি, পোকামাকড়ের উৎপাত থাকলে তো কথাই নেই। খাবারের উপর বসলে, সেই খাবারে নানা রকমের জীবাণু জন্ম নেবে, সে তো জানা কথা। এইসব ক্ষতিকারক জীবাণুর মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাস শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে আমাদের খাদ্যনালীতে বাসা বাঁধে। সেখানে প্রদাহ তৈরি করে খাদ্যশোষণে বাধা দেয়। ফলে পেটে ব্যথার মতো সুতরাং খাবার ও পানীয় যাতে পরিষ্কার পাত্রে রাখা হয়, তার দিকে নজর রাখতে হবে বৈকি। শুধু তাই নয় খাবার জলও ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।
শিশুদের আবার অপুষ্টিজনিত কারনেও ডায়েরিয়া হতে পারে। ভিটামিন এ জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় খনিজের ঘাটতির কারণে এই রোগে ভুগতে হতে পারে। আরও একটি কারণে ডায়েরিয়া হতে পারে। বর্ষাকালে বাচ্চাদের সর্দিকাশি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সেই কারণে বাচ্চাদের অ্যামোসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। আর এই অ্যান্টিবায়োটিক থেকে ডায়েরিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই রকম কিছু বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধটি বন্ধ করে দিতে হয়।
ডায়েরিয়ার চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ জানা প্রয়োজন। যেমন শিশুটি দিনে কতবার মলত্যাগ করেছে, এবং তার রঙ কেমন, বমি বা পেটে ব্যথা আছে কিনা, জ্বর আসছে কিনা ইত্যাদি। তেমনই শিশটি বাইরে কিছু খেয়েছিলো কিনা, বাড়িতে পানীয় জলের সুত্রটি কি? বাচ্চাটি সম্প্রতি কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলো কিনা ইত্যাদি তথ্য জানা প্রয়োজন।
ডায়েরিয়া থেকে দেখা দিতে পারে আরও কিছু সমস্যা। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ডিহাইড্রেশন। এর কারণ হলো শরীরে জল ও লবণের অভাব। বাচ্চার চোখ ও ঠোঁটে শুকনো ভাব, ঠিকমতো প্রস্রাব না হওয়া, ঝিমিয়ে পড়া ভাব ইত্যাদি যদি দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে ডিহাইড্রেশনের কারনেই তা হচ্ছে। তাই ডায়েরিয়া হলে সবার আগে শরীরে যাতে জলের পরিমাণ ঠিক রাখা যায়, তা দেখতে হবে। যদি বাচ্চা বমি করতে থাকে, তা হলে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সাহায্যে তা বন্ধ করা দরকার।
ডায়েরিয়ার মূল কারণ না জেনে চিকিৎসা করা উচিৎ নয়। প্রাথমিক ভাবে ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেটাই দেখা উচিৎ। এই সময় বাচ্চাকে ওআরএস খাওয়ানো উচিৎ। খুব বাড়াবাড়ি হলে স্যালাইন দিতে হতে পারে। এছাড়া জিঙ্ক সিরাপ এবং প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে। ডায়েরিয়া যদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হয়, তবেই অ্যান্টিবায়োটিক দরকার। নচেৎ নয়।
যদি কোনও শিশু পাঁচ থেকে ছয়দিন ধরে ডায়েরিয়ায় ভুগতে থাকে তবে, এই সময় দুধ বা দুধ থেকে তৈরি কোনও খাবার খাওয়ানো উচিৎ নয়। তবে মায়ের বুকের দুধ সব সময়েই শিশুর পক্ষে ভালো। তা খাওয়াতে কোনও বাধা নেই।
ডায়েরিয়ার কারণ, সংক্রমণের ধরন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে কতদিনে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। সাধারণত ঠিকমতো চিকিৎসা হলে পাঁচ থেকে সাত দিনের মতো সময় লাগতে পারে।
ডায়েরিয়া মোকাবিলা করার উপায়গুলি কিন্তু একেবারেই কঠিন নয়। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস থাকাটা অন্যতম শর্ত। খাবার সময় ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে। শুধু তাই নয় ছোট বাচ্চাদের খাবার তৈরি করার সময় পরিচ্ছন্ন পোশাক ও হাত পরিষ্কার থাকাও সমান জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে পানীয়জলের ব্যাপারেও। তা যেন বিশুদ্ধ হয়, এবং পরিষ্কার পাত্রে রাখা থাকে।
পাঁচ বছর বা তার কম বয়সী বাচ্চাদের ভাইরাল ডায়েরিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। বাচ্চার দেড় থেকে আড়াই মাস বয়সে বিশেষ ভ্যাকসিন এই ধরনের ডায়েরিয়ার হাত থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করবে। অন্তত পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে ফোটানো জল খাওয়ানো উচিৎ।
ডায়েরিয়ার কারণে প্রতি বছর বহু শিশুর মৃত্যু হয়। এর একটা প্রধান কারণ সচেতনতা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এই সচেতনতার বড়োই অভাব। মানুষ যত সচেতন হবে, ততই এই ধরনের রোগের প্রকোপ কমবে।
Dr. Sumita Saha, MBBS (Gold medallist), DCH (UK), MRCPCH (UK), is a Consultant Neonatologist and Paediatrician, practising in leading hospitals in Kolkata like Fortis Hospital (Anandapur), Woodlands Multispecialty Hospital, Asia-Columbia Hospital, Bellevue clinic and Mission of Mercy Hospital. Her Paediatric and Neonatal training took place in the U.K. where she worked for 8 years in renowned centres like Nottingham city Hospital, Leeds general infirmary etc.
To contact click on http://www.paediatricdoctorsinkolkata.com/