ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের গর্ব আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা বীর বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হল। রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তর প্রথম পর্যায়ে ৫৭ লক্ষ টাকা অনুমোদন করায় এই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। রায়না ২ নম্বর ব্লকের সুবলদহ গ্রামে দেশনায়ক রাসবিহারী বসুর পবিত্র জন্মস্থানে বিদ্যুতের লাইন টেনে উচ্চ বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছে। ভিটের গার্ড ওয়ালের কাজ শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে হবে বিপ্লবীর জন্মগৃহ, আবক্ষ মূর্তি, শৌচালয়। এই পঁাচটি কাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হবে। এছাড়া রায়নার বিধায়ক তহবিলের ৫ লক্ষ টাকায় গড়ে তোলা হবে মুক্তমঞ্চ। দেশের স্বাধীনতার ৭১ বছর কেটে যাওয়ার পর আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্ববরেণ্য বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর জন্মভিটে সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হওয়ায় খুশি রায়নাবাসী।
এরই মধ্যে গ্রামবাসীদের আক্ষেপ, গত বছর কেন্দ্রীয় সরকারের ‘তেরঙ্গা যাত্রা’–র অঙ্গ হিসেবে এই সুবলদহ গ্রামে বীর বিপ্লবীর জন্মভিটে পরিদর্শন করে গিয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ ও কয়লামন্ত্রী পীযূশ গোয়েল। তিনি এখানে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলে গিয়েছিলেন, বিপ্লবীর জন্মভিটেকে বিশ্বের দরবারে স্মারক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দেশের আদর্শ গ্রাম এবং তীর্থক্ষেত্রে হিসেবে তৈরি করা হবে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার বিপ্লবীর জন্মভিটের জন্য এখনও পর্যন্ত কিছুই করেনি বলে ক্ষোভে ফুঁসছেন গ্রামবাসীরা। তবে তৃণমূল সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরই বিধানসভায় এই দেশনায়কের জন্মভিটেকে সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকারের কাছে দরবার করেছিলেন রায়নার বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই। নেপালবাবু বলেন, ‘স্বাধীনতার পর অনেক দল কেন্দ্রে ও রাজ্যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল। তারা সবাই এই জন্মভূমি নিয়ে রাজনীতিই করে গেছেন। এতদিন করেছে কংগ্রেস ও সিপিএম, আর গত বছর বিপ্লবীর জন্মভিটেয় এসে রাজনীতি করে গেছেন বিজেপির এক মন্ত্রী। কিন্তু কাজের কাজ কেউ কিছুই করেননি।’ তবে এবার রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে রায়নার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে বলে তিনি জানিয়েছেন। রাসবিহারী বসু ট্রাস্ট কমিটির পক্ষে মনসুর রহমান ও দীপক চৌধুরি জানালেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কের জন্মভিটে যাতে তীর্থস্থান বা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে, সেইজন্য তঁারা পর্যটন দপ্তরের কাছে জেলা শাসকের মাধ্যমে আবেদন জানিয়েছিলেন। তাতে ৫ কোটি ৬ লক্ষ টাকার ১১টি প্রকল্প তুলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ৫টি প্রকল্প প্রাথমিক পর্যায়ে অনুমোদন করেছে পর্যটন দপ্তর। তার কাজ শুরু হয়ে গেছে। পঁাচটির মধ্যে রয়েছে উচ্চ বাতিস্তম্ভ, জন্মগৃহ, আবক্ষ মূর্তি, শৌচালয় ও বাউন্ডারি ওয়াল। ইতিমধ্যে উচ্চ বাতিস্তম্ভ বসানো হয়েছে। কংক্রিটের বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ চলছে। পরপর এই পাঁচটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরই বাকি গেস্ট হাউস, লাইব্রেরি, পার্ক এবং পাকা রাস্তা ইত্যাদির অনুমোদনও পাওয়া যাবে বলে পর্যটন দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে।