এক বছর আট মাস পর, মঙ্গলবার থেকে ভাঙড়ে বিদ্যুতের আঞ্চলিক সাবস্টেশন তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেল। গত ১১ আগস্ট দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের তত্ত্বাবধানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকের পরেই কাজ শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এদিন সকাল ১১টা নাগাদ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে সাবস্টেশনের গেট খোলা হয়। ভেতরে জেলা প্রশাসনের এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে গ্রামবাসীদের একাংশও যান। ১৪ একর জমির ওপর আঞ্চলিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের বেশ কিছু দাবিদাওয়া ঘিরে আন্দোলন হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন কাজ থমকে যায়। অবশেষে এদিন কাজ শুরু হল। ভেতরে আগাছার জঙ্গল পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে শিগগিরই। এই মুহূর্তে যে সমস্ত জিনিসপত্র কাজে লাগছে না, তা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ক্রেন দিয়ে সেগুলি সরানোর কাজ শুরু হয়।
সকাল থেকেই উৎসাহী গ্রামবাসীদের একাংশ সাবস্টেশনের সামনে জড়ো হন। এডিএম ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন মৃণাল কুমার রানো, ভাঙড়–২–এর বিডিও কৌশিক মাইতি, জেনারেল ম্যানেজার এডিসিএল সুমিতকুমার রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জানান, আজ থেকেই কাজ শুরু হল। পর্যায়ক্রমে কাজ করা হবে। যন্ত্রপাতি কী অবস্থায় আছে, তা দেখতে হবে। ক্ষতিপূরণ একপ্রস্থ ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে।
ভাঙড়ের ওই অংশে এই মুহূর্তে সাবস্টেশনের জন্য ৩০০ মিটারের মধ্যে একটি বড় টাওয়ার বসাতে হবে। ভারতীয় বিদ্যুৎ আইন মেনে দুটি লাইনের মধ্যে দূরত্ব তার থেকে ভূমি বা কোনও স্থায়ী কাঠামোর দূরত্ব পর্যালোচনা করে দেখা হবে। পাওয়ার গ্রিডের সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশের পরিবর্তে সাবস্টেশনের জন্য যন্ত্রাংশ রাখা হবে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের যে চুক্তি হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে ১০০০–এর বেশি মানুষকে ক্ষুদ্র উদ্যোগ তৈরিতে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্থানীয় রাস্তা নির্মাণ, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উন্নতি, বিদ্যেধরী খাল সংস্কার, হাড়োয়া রোডে আলো, গ্রামে আলো ছাড়াও আরও বেশ কিছু জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার ভাঙড়ের বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভেতরে গিয়ে দেখা যায় বহু জিনিসপত্রই ভেতরে নেই। অফিসঘরের ভেতর থেকে কম্পিউটার ও অন্যান্য সামগ্রী চুরি হয়ে গেছে। সাবস্টেশনের ভেতরে আগাছার জঙ্গল। বড় বড় যন্ত্রপাতিতে জঙ্গল জড়িয়ে রয়েছে। আধিকারিকদের সূত্রে জানা গেছে, নতুন পরিকল্পনায় পিজিসিআইএলের দুটি ৪০০ কিলো ভোল্ট বিদ্যুৎ সংবহন লাইন তৈরি হল। যার মধ্যে রাজারহাট–গোকর্ণ–ফরাক্কা হয়ে পূর্ণিয়া এবং অন্যটি জিরাট–সুভাষগ্রাম–লিলো হয়ে বিদ্যুৎ সংবহন করবে।
সাবস্টেশনের জন্য জমিদাতাদের মধ্যে এখনও পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের থেকে ১২ জন টাকা পাবেন। এ ছাড়াও স্থানীয় মানুষদের বেশ কিছু দাবিদাওয়া রয়েছে। আধিকারিকরা বলছেন, গোটা প্রক্রিয়াটা চলবে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে।