ওঁরা ভয় পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। প্রথমে অমিত শাহ আর তারপর নরেন্দ্র মোদি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আগামী লোকসভা ভোটের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অবশেষে মানছেন মোদী-শাহ। তাই দু-দুটো সাক্ষাৎকার দিয়ে নাম করে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তির ছুড়লেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়া এবং এএনআইকে নিজেই প্রশ্ন বেঁচে দিলেন। তিনি নিজেই জবাব দিলেন। এএনআইয়ের প্রধান সম্পাদক টুইট করে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি মুখোমুখি বসে কবে সাক্ষাৎকার দেবেন? সাংবাদিক প্রশ্ন করছেন – এনআরসি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে রূপায়ণ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন গৃহযুদ্ধ হবে। আপনার মতামত কি? মুখ্যমন্ত্রী আদতে বলেছিলেন বিজেপি যেভাবে এনআরসি প্রয়োগ করছে তাতে গৃহযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী জবাব দিচ্ছেন- যাঁরা বাস্তবতার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখেন না , তাঁরাই এসব বলছেন। দেশের মানুষের নাড়ির খবর রাখেন না।
অথচ মুখ্যমন্ত্রী যখন জাতীয় স্তরে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন এনআরসি থেকে কেবলমাত্র বাঙালি নয় বিহারী, মারওয়ারি, রাজস্থানি থেকে দক্ষিণ ভারতীয় এক কথায় ভারতীয়দেরই নাগকরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তখন প্রশ্নকর্তা প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সেই প্রশ্ন নিজের মুখের দিকে নিজেই ছুড়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলছেন – না না। একজনও ভারতীয় বাদ যাবে। হঠাৎ ভারতীয়দের জন্য প্রাণ কেঁদে উঠলো কেন? কারণটা জলবৎ তরলং। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি থেকে ভারতীয়দের নাম বাদ পড়ার কাহিনী ফাঁস করে দেওয়ায় বিজেপিই মুশকিলে পড়েছে। বিশেষ করে বহু হিন্দুদের নামও বাদ পড়েছে। হিন্দুদের রক্ষাকর্তা নিজেরায় ভক্ষক হয়েছে। এই সত্যটা প্রকাশ হওয়ার পরেই প্রমাদ গুনছে আরএসএস নামক কৌরব বাহিনী। অসমের শিলচরে বিজেপি ব্যাপক রাজনৈতিক সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু বরাকভ্যালি এনআরসি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে। তাইতো তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলকে এয়ারপোর্টে আটকে দেওয়ার যুদ্ধংদেহী মূর্তি ধরতে হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে সাজানো বাগানের মতো ইন্টারভিউ তৈরি করে বলতে হয়েছে- সব ভারতীয়রা তালিকায় থাকবে। প্রশ্নটা হল – ঐতিহাসিক কারণে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশিরা থাকতেই পারেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা চল্লিশ লক্ষ? হতে পারে? সুপ্রিম কোর্ট কয়েকদিন আগে লম্বা তিরস্কার করেছেন। কেন আগ বাড়িয়ে মন্তব্য করা হয়েছে? এখন প্রধানমন্ত্রীকে বলতেই হচ্ছে – কোনও ভারতীয় বাদ পড়বে না। একদিকে বিজেপি চায় বাংলাদেশিদের বিতরণ করতে আর অন্যদিকে বাংলাদেশি হিন্দুদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য নাগরিক আইন সংশোধন করতে। এই দুমুখো রাজনীতি এবার ফাঁস হয়ে গিয়েছে। এতে গোটা উত্তরপূর্বর রাজ্য গুলো ক্ষেপে লাল।
শরিক আসাম গণপরিষদ এনডিএ ছাড়বে। প্রফুল্ল মোহন্ত নিজেই হুমকি দিয়েছেন। যে আলফা উগ্রপন্থীদের সঙ্গে এত দিন ধরে শলাপরামর্শ করে।ভারতের সংবিধানে আওতায় আনা হচ্ছে, সেই আলফা নেতারাও হুমকি দিয়েছে যে যদি বাংলাদেশি হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তারা ফের শান্তি চুক্তি ভঙ্গ করবে করে আন্দোলনে নামবে।
মোদী-অমিত শাহরা এটা মানেন, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতী এক হওয়ার অর্থ বিজেপি সাফ। তাই কোথাও থেকে তো জমি কব্জা করতে হবে। তাই টার্গেট বাংলা। তাই দেশ ভাগের সুড়সুড়ি দিয়ে ওপর বাংলা থেকে আগত মুসলিম বিরোধী তাস ব্যবহারই এক মাত্র অস্ত্র। প্রধানমন্ত্রী পিসি সরকারের মতন ম্যাজিক দেখানোর মতো বলছেন এবার নাকি গাদা গাদা আসন পাবেন এবার। কিন্তু কোথা থেকে? কেউ জানে না। ভয় পেয়েছেন মমতাকে। যিনি সব বিজেপি বিরোধী দল গুলোকে একসূত্রে বাঁধার চেষ্টা করছেন। তাই মমতাই এবার মোদী-অমিত শাহ’র টার্গেট।