অসমের নাগরিকপঞ্জিকরণ (এনআরসি) বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরই আস্থা রাখলেন রাজ্যের বিশিষ্টজনদের একাংশ। ‘অসমের পাশে বাংলা’— এই শিরোনামে শুক্রবার তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বিশিষ্টরা প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভার আয়োজন করেছিলেন। সেখানে পরোক্ষে মমতাকেই প্রধানমন্ত্রী করার দাবি তোলা হয়। বক্তারা অসমেও যাবেন বলে জানিয়েছেন। এনআরসি নিয়ে আপাত অরাজনৈতিক আলোচনাসভা হলেও চড়া সুরেই বিজেপি বিরোধিতায় সরব হন বিশিষ্টরা।
অসমের বাংলাভাষীর বসবাসকে অনুপ্রবেশের সঙ্গে এক করে দেখা ঠিক নয়। সাবেক পূর্ববঙ্গের সিলেটের বাসিন্দা নাট্যকার ও অভিনেতা বিভাস চক্রবর্তী ও তাঁর পরিবার কীভাবে ঠাঁইনাড়া হতে হতে কলকাতার পাকাপাকি বাসিন্দা হয়েছেন, তাঁর বর্ণনা দেন। তাঁর প্রশ্ন, এখন তাঁকে যদি দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হয়, তাহলে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড আর পাসপোর্ট ছাড়া কিছু নেই। তাঁর দাবি, এনআরসির তালিকা প্রকাশের পর অনেকের এসব নথি থাকা সত্ত্বেও নাম ওঠেনি। তাঁর মতে, এই পঞ্জিকরণ মোটেই বিজ্ঞানসম্মত ও মানবিক পদ্ধতি মেনে হয়নি। অসম বন্যাপ্রবণ রাজ্য। সেখানে অনেকের পক্ষেই তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তাই তাদের নাগরিকত্ব খারিজ করা অন্যায়। কবি সুবোধ সরকার সরাসরি কেন্দ্রের শাসক দলকে ফ্যাসিস্ট বলে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টকে সামনে রেখে বাঙালিদের শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। এনআরসি’র প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পদক্ষেপ করেছেন, তার পক্ষে সরব হয়েছেন সুবোধ। মমতা বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে আত্মত্যাগ করতে পারেন। তাই এনআরসি’র তালিকা প্রকাশ হতেই বাদ পড়া ৪০ লক্ষ মানুষের হয়ে প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। অসম সমস্যার সমাধান করতে হলে মমতাকেই দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে, এমনটাই মনে করেন ঔপন্যাসিক আবুল বাশার।
তাঁর দাবি, উনি সততার প্রতীক। সহিষ্ণুতারও প্রতীক। অসমের সমস্যা সমাধান করতে হলে মমতাকেই দেশ চালাতে দিতে হবে। সরাসরি বিজেপির নাম করেননি অধ্যাপক অভিরূপ সরকার। তাঁর মতে, এনআরসি-র এই তালিকা প্রকাশের নেপথ্যে রয়েছে যারা দেশ শাসন করছে। এই শাসকদের হিন্দুত্ব তাস ছাড়া অন্য কিছু নেই। তাই এই বাংলা বিদ্বেষ তৈরি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে জোর করে ধর্মের বিভাজন করা হচ্ছে। এর বিররোধিতা করতে হবে। অনুপ্রবেশের পক্ষে নন তিনি। কিন্তু বছরের পর বছর সীমান্ত দিয়ে কীভাবে অনুপ্রবেশ হল, তার জবাব দিতে হবে অসম রাইফেলসকে। বিএসএফ তার দায় তো অস্বীকার করতে পারে না। নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, অসমে বাংলাভাষীদের বাসস্থান গড়ে তোলার শতাব্দী প্রচীন ইতিহাস রয়েছে। সেই ইতিহাস উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অসম বন্যাপ্রবণ ভূখণ্ড। সেই ধরনের জমিতে চাষের কাজ অসমের মানুষ জানত না। সিলেট ইত্যাদি অঞ্চল থেকে বাঙালি চাষিদের নিয়ে এসে জমিতে বসিয়েছিল ইংরেজরা। চা বাগানেও শ্রমিকদের জন্য বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে মানুষকে এনে ঠাঁই দিয়েছিল। সেই থেকেই তারা ওই রাজ্যের বাসিন্দা। এই ইতিহাসের কথা মাথায় রাখা দরকার। এছাড়াও নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, প্রতুল মুখোপাধ্যায়, শুভাপ্রসন্ন এই আলোচনায় অংশ নেন।