রাজাজি হল থেকে মেরিনা সৈকত। দূরত্ব মেরেকেটে ২ কিলোমিটার। সেই রাস্তার দু’ধারে বুধবার সকাল থেকে তিলধারণের জায়গা নেই। ভিড় জমিয়েছেন কয়েক লক্ষ মানুষ। বেলা যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে ভিড়। সকলেরই চোখে জল। প্রিয় ‘কালাইনার’ যে অন্তিমযাত্রায় চলেছেন। তাঁদের কাছে করুণানিধি শুধুমাত্র প্রিয় নেতা নন, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি ‘থালাইভা’। তাই শেষবারের মতো করুণানিধিকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছেন ছোট থেকে বড়, নানা বয়সি মানুষ। কারও হাতে প্রিয় নেতার ছবি। কেউ বা হাজির দলীয় পতাকা নিয়ে। থেকে থেকেই তামিল ভাষায় স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘কালাইনারের ঐতিহ্য দীর্ঘজীবী হোক।’ শেষবার যঁাকে দেখার আশায় হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ দিয়েছেন তিনজন।
বুধবার সকালে রাজাজি হলে তামিলনাড়ুর পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রীর দেহ রাখা থাকলেও তাঁকে কোথায় সমাধিস্থ করা হবে, তা নিয়ে জল্পনার অন্ত ছিল না। লড়াই গড়ায় আদালতে। শেষ পর্যন্ত সকালে করুণানিধিকে মেরিনা সৈকতের আন্না মেমোরিয়ালে সমাধিস্থ করার রায় দেয় মাদ্রাজ হাইকোর্ট।
বিকাল চারটে নাগাদ তেরঙ্গায় ঢাকা করুণানিধির দেহ নিয়ে শুরু হয় শেষযাত্রা। মেরিনা বিচের উদ্দেশে। কাচঢাকা গাড়িতে। পরনে চেনা সাদা জামা, ধুতি। গলায় হলুদ উত্তরীয়। চোখে ট্রেডমার্ক হলদে কাচ-কালো ফ্রেমের চশমা। সকাল থেকে বাবার শায়িত দেহের পাশেই ছিলেন করণানিধির ছেলে এম কে স্ট্যালিন, তামিজহারাসু এবং কন্যা কানিমোঝি সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। চোখে জল নিয়েই অন্য সকলের সঙ্গে ‘আপ্পা’র শেষযাত্রায় পা মেলান তাঁরা। মেরিনা সৈকত পর্যন্ত গোটা রাস্তায় কড়া নিরাপত্তা থাকলেও মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিসকে।
টানাপোড়েন শেষে গান স্যালুটের মাধ্যমে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয় করুণানিধিকে। ‘যে মানুষটি কাজ করার জন্য কখনও বিশ্রাম নেননি, তিনি এবার চিরবিশ্রামে গেলেন’- কফিনের গায়ে লেখা কথাগুলিকে সত্যি করেই মেরিনা সৈকতে শায়িত ‘কালাইনার’।