তামিল রাজনীতির পরম্পরা মেনেই হিন্দু হলেও প্রয়াত করুণানিধিকে সমাহিত করার পথেই গেল ডিএমকে। এই সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছে করুণানিধির ব্যক্তিগত বিশ্বাস। নাস্তিক ছিলেন করুণানিধি। তাঁর শেষকৃত্য দাহ না সমাহিত, কোন পথে হবে তাই নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা দিয়ে যাননি করুণানিধি। তাই আগের মুখ্যমন্ত্রীদের মতোই দেহ সমাহিত করাতেই সিলমোহর দিচ্ছে তাঁর পরিবার।
করুণানিধি ইসাই ভেল্লার সম্প্রদায়ের মানুষ। তামিলনাড়ুতে এই সম্প্রদায় এখন তফসিলি জাতিভুক্ত। এই সম্প্রদায়ের মানুষদের দাহ করা হয়। তবে জাতপাতে কখনও বিশ্বাস করেননি করুণানিধি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ই ভি রামস্বামী পেরিয়ারের ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পরে দ্রাবিড় আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন। দ্রাবিড় আন্দোলনের নেতারা নাস্তিক ছিলেন। পেরিয়ার ঘোষণা করেছিলেন ভগবানের অস্তিত্ব নেই। তাঁর অনুগামী ছিলেন করুণানিধি। পেরিয়ারের অনুগামী ছিলেন তামিলনাড়ুর আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সি এন আন্নাদুরাই। তাঁদের দু’জনকেই সমাহিত করা হয়েছে। ডিএমকে ভেঙে এডিএমকের জন্ম হলেও সমাহিত করার পরম্পরায় ছেদ পড়েনি। মেরিনা বিচেই সমাহিত করা হয়েছে এডিএমকে নেতা তথা প্রাক্তন দুই মুখ্যমন্ত্রী এম জি রামচন্দ্রন এবং জে জয়ললিতার দেহ।
রাজনৈতিক মহল অবশ্য অন্য একটি ব্যাখ্যাও দিচ্ছে। তাঁদের মতে, তামিলনাড়ুতে কাল্ট রাজনীতির রমরমা। সেখানে জনপ্রিয়তম নেতাকে সমাহিত করে সৌধ বানাতে পারলে, আখেরে দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতাদের লাভ। জনপ্রিয় নেতার সঙ্গে ছবি তুলে অনুগামীদের বার্তা দিতে সুবিধা হয়। জয়ললিতার মৃত্যুর পরে এডিএমকের নেতৃত্ব নিয়ে শশীকলার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন পনিরসেলভাম। কোণঠাসা পনির মেরিনা বিচে জয়ললিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। আর সেই ছবি দেখিয়ে পালের হাওয়া অনেকটাই নিজের দিকে ঘোরাতে সক্ষম হন তিনি। করুণানিধিকে সমাহিত করে একই উদাহরণ গড়তে চাইছেন ডিএমকে নেতারা। কলাইনার পরবর্তী সময়ে এভাবেই রাজনীতির অক্সিজেন নিতে চাইছে ডিএমকে।