নেপালে বসেই এটিএম জালিয়াতি নিয়ন্ত্রণ করছে দুষ্কৃতীরা। কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছিড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্কিমিং গ্যাংয়ের সদস্যদের তারাই পরিচালনা করছে। তৈরি করা হচ্ছে ক্লোন কার্ডও। স্কিমিং-এর প্রশিক্ষণও চলছে সেখানে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই চক্রের পাণ্ডারা হাজির থাকছে। এটিএম জালিয়াতি-কাণ্ডের তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এই গ্যাংয়ে রোমানিয়ানদের পাশাপাশি বুলগেরিয়া ও তুরস্কের বাসিন্দারাও যোগ দিয়েছে বলে খবর। সম্প্রতি এই দুই দেশের বেশ কয়েকজন নাগরিক ধরাও পড়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তার ভিত্তিতেই গোয়েন্দাদের অনুমান, এই গ্যাংয়ে অন্য দেশের নাগরিকরাও থাকতে পারে। এই বিষয়ে ধৃত দুই বিদেশিকে জেরা করা হচ্ছে।
স্কিমিংকাণ্ডের জাল যে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও ছড়িয়েছে, তা বুঝতে পারছেন গোয়েন্দারা। তা না হলে এত মসৃণভাবে বিভিন্ন প্রান্তে নেটওয়ার্ক চালানো সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই ধৃত দুই রোমানিয়ান জানিয়েছে, তাদের নেপালে যাতায়াত ছিল। সেখান থেকেই গোয়েন্দাদের সন্দেহের সূত্রপাত। জানা গিয়েছে, এর আগে নেপাল পুলিসের হাতে একাধিক এটিএম স্কিমার গ্যাং ধরা পড়েছে। যাদের বেশিরভাগই রোমানিয়ার বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে ক্লোন করা ভারতীয় ডেবিট বা এটিএম কার্ড পাওয়া গিয়েছে। আসলে এখানকার কার্ড ব্যবহার করে নেপালের ব্যাঙ্কগুলি থেকে টাকা তোলার সুবিধা রয়েছে। সেই কারণেই তথ্য চুরি করার পর ক্লোন কার্ড দিয়েই নেপাল থেকে টাকা তুলছে এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। এর আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধরা পড়া স্কিমিং গ্যাংয়ের সদস্যদের জেরা করে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র দেশ থেকেই তারা টাকা তুলছে না। নেপাল থেকেও তারা টাকা তুলেছে। পাশাপাশি নেপালের বিভিন্ন ব্যাঙ্কের এটিএমে স্কিমার মেশিন লাগিয়ে তথ্য চুরি করে তারা টাকা হাতিয়েছে বলে খবর।
তদন্তে জানা গিয়েছে, এশিয়া ও ইউরোপের স্কিমিং গ্যাংয়ের সদস্যদের মাথারা মাঝেমধ্যেই নেপালে আসছে। তারা মূল টার্গেট করেছে ভারতকেই। কাঠমাণ্ডুর বিভিন্ন জায়গায় তারা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে বলে খবর। কীভাবে বিভিন্ন এটিএমে অপারেশন চালাতে হবে, তা নিয়ে একাধিক প্রশিক্ষণ শিবির করেছে। যেখানে ভারত ছাড়াও দেশের অন্যান্য প্রান্তের যুবকরাও হাজির ছিল প্রশিক্ষণ নিতে। ধৃত রোমানিয়ানদের বক্তব্য, এক নয়, একাধিক স্কিমিং গ্যাং কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কাজ করছে। মূলত ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়েই তার নেপালে আসছে। দেশের কোন প্রান্তে কাকে পাঠানো হবে এবং কীভাবে যাবে, তা সেখানে বসেই মাথারা ঠিক করছে। সেইমতো গ্যাং মেম্বারদের ডেকে পাঠানো হচ্ছে এখানে। তারপর তাদের বলে দেওয়া হচ্ছে কোন জায়গায় অপারেশন চালাতে হবে। শুধু তাই নয়, বেশকিছু অপরাধ করার পর গ্যাংয়ের সদস্যরা এখানে পালিয়ে আসছে। কিছুদিন লুকিয়ে থাকার পর তাদের অন্য দেশে পাঠানো হচ্ছে। পুলিসের হাতে ধরা পড়া এড়াতেই এই কৌশল নিয়েছে তারা। যাতে মূল মাথাদের সম্পর্কে তথ্য না মেলে। আসলে নেপাল থেকে সহজেই যে কোনও দেশে যাওয়ার সুবিধা থাকায় এই জায়গাকেই বাছা হয়েছে। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, ভারতে আসার আগে ধৃত দুই রোমানিয়ান অন্য কোনও দেশে ঘুরে এসেছে এবং সেখানকার বেশকিছু ব্যাঙ্কের এটিএমে স্কিমিং মেশিন লাগিয়ে তথ্য চুরি করেছে। সেই কারণেই তাদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, কোন কোন দেশে তারা ইতিমধ্যেই ঘুরে এসেছে। তবে গোয়েন্দারা নিশ্চিত, এর মূল মাথা বিদেশেরই কোন নাগরিক। তার নেপালে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।