“বলি বাজারের ফর্দটা দেবে? নাকি নিজেই চলে যাবো? সকাল থেকে এই এক হয়েছে ফোনের জ্বালা, কখনো বোন তো কখনো মেজ পিসী কখনো ফুল জ্যেঠীমা। গুষ্টিও বটে এক খানা” নিজের মনেই গজরাছেন কালিকাপ্রসাদ বাবু।
কিছু পরেই গিন্নীর আবির্ভাব।
“ফর্দ ফর্দ করে চেঁচিয়েই গেলো, কখন থেকে যে রেডি করে রেখেছি তা আর চোখে পড়বে?চোখের মাথা তো খেয়েছো। ওদিকে চাটুজ্যে গিন্নী পিঠ কাটা ব্লাউজ পরলে…চোখ একেবারে সাড়ে বারো আনা রসগোল্লা। বাবাগো ধরে বেঁধে জলে ফেলে দিলে…”।
অতঃপর কান্না এবং…এ বাড়ির নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। কাক, চিল কেউ এই সময় ভুলেও এ পথ মাড়ায় না।
পাড়া প্রতিবেশীও এখন মোটামুটি নিত্যকার নিমের পাঁচন গেলার মতন করে এটিকে অভ্যেস করে নিয়েছেন। তাই নয় নয় করে সাতাশ বছর কাটিয়ে দিলেন বোস দম্পতি। তবে বিদেশ হলে কি হতো বলা যায় না।
মার্চের হাল্কা রোদে পাড়ার মোড়ে ম্যারাপ বেঁধে ফাংশন হচ্ছে। “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে…”। গানের আমেজে গুন গুনিয়ে ব্যাগ হাতে বাড়ি চলেছেন কালিকাপ্রসাদ। “কি সব যেন নারী দিবস ফিবস হবে, যতসব। সন্ধ্যে বেলা ফাংশন, নাচগান…”।
বাজারের ব্যাগ টা ঠক করে নাবিয়ে দিয়েই রান্নাঘরে দৌড়লেন কালিকা বাবু।
স্নান সেরে বেরিয়ে অবাক বিভা দেবী। টেবিলে চা আরে সজনে ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছেন স্বামী।
“বলছি কি, সারা জীবন তো তুমিই হাত পুড়িয়ে রেঁধে খাওয়ালে, আমার তেমন তো কিছু ঠিক আসে না, তাই চা টা খেয়ে দেখো। চিনি একটু কম-বেশী হতে পারে”।
স্বামীর হাতের চা পেয়ে আহ্লাদে আটখানা বিভা দেবী, তখন চায়ের মিষ্টতা নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন।
“আর গোলাপের বড্ড দাম বুঝলে, তাই সজনে ফুল-ই আনলাম।খাওয়াও হলো, দেওয়াও হলো। আর হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি, সন্ধ্যে বেলা তৈরী থেকো, পাড়ার ফাংশনে যেতে বলেছে”।
চা টা বেশী মিষ্টি হোয়ে গেছে, তাতে কি – এত ভাল আর ভালোবাসার চা বিভা দেবী কখনো খান নি।
হোক না এবার একটু অন্যরকম নারী দিবস।