জোটের বাঁধন শক্ত করতে দিল্লিতে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে কথা বললেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ছিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও।
কেন্দ্র থেকে মোদীকে উৎখাতে বিরোধীদের জোটবদ্ধ লড়াই ও এনআরসির প্রতিবাদে বিরোধীদের আন্দোলনের পদক্ষেপ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপিকে হঠাতে ফেডারেল ফ্রন্টের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর ফর্মুলা ‘একের বিরুদ্ধে এক লড়াই’। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির শক্তির উপর ভরসা করতে চাইছেন তিনি। এদিনও বৈঠকে ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধীকে ‘একের বিরুদ্ধে এক লড়াইয়ের’ প্রস্তাব দেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
তবে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেই প্রশ্নে মমতা কবিগুরুর গানের পংক্তি ‘আমরা সবাই রাজা’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “বিরোধী জোটে নেতৃত্ব দেওয়ার অনেকেই আছেন। কিন্তু আসল কাজ হল বিজেপিকে ভোটের লড়াইয়ে হারাতে বিরোধী জোট গঠন করে লড়াই করা।” এর আগে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দল মমতার নেতৃত্ব মেনে নেওযার কথা জানায়। কিন্তু তাতে আমল না দিয়ে জাতীয় স্তরে পোক্ত বিরোধী জোট গঠনের প্রক্রিয়াতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। সোনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তাঁর মন্তব্যেই তা আবারও স্প্ষ্ট।
এর আগে বিরোধী ঐক্যে শান দিতে সংসদ ভবনে এদিন লালকৃষ্ণ আদবানীর সঙ্গেও দেখা করেন মমতা। সূত্রের খবর, কোথায় আঘাত হানলে বিজেপিকে নির্বাচনী মঞ্চে পরাস্ত করা যায়, সে বিষয়েও বিজেপির বর্ষীয়ান নেতার কাছ থেকে খোঁজখবর নেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মমতার কৌশলী পদক্ষেপে বিজেপি শিবিরে গুঞ্জণ তুঙ্গে। কথা হয় জেডিএস প্রধান দেবগৌড়া সহ বিজেপি বিরোধী সব আঞ্চলিক দলের নেতা, নেত্রীদের সঙ্গেও। ১৯শের জানুয়ারিতে বিরোধী জোটের ক্ষমতা প্রদর্শণে ব্রিগেডে সভার ডাক দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সেই সভার আমন্ত্রণ নিয়েই এদিন হাজির হন তিনি।
জাতীয় স্তরে বিরোধী জোটের কারিগর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তাঁর বিরোধিতায় সরব রাজ্যের বাম ও প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। বাংলায় জোটের প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলে একা লড়তে অসুবিধে নেই। আবার অন্যান্য দলের সঙ্গে চলতেও বাধা নেই।” তবে বিষয়টি সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে মমতা কংগ্রেস সহ অন্যান্যদের বার্তা দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
মমতা সোনিয়া বৈঠকে এদিন স্বাভাবিকভাবেই আসামের এনআরসি খসড়া প্রসঙ্গটি উঠে আসে। এক্ষেত্রে বিরোধীদের আন্দোলনের রূপরেখা নিয়েও দুই নেত্রীর মধ্যে কথা হয়েছে বলে জানান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বিজেপি। বিরোধীরা তা চায় না।” এই মন্তব্যেই স্পষ্ট দেশে অরাজকতা তৈরি হলে কার্যত তার দায়ভার আগেই বিজেপির উপরই দিয়ে রাখলেন তৃণমূল নেত্রী।
দিল্লি দখলের ডাক দিয়েছেন মমতা। সেই ডাকে সামিল বিজেপি বিরোধী দলগুলি। দিল্লিতে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে অন্যান্য দলের নেতা, নেত্রীদের নানান বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যামে পোক্তও হচ্ছে বিরোধী জোট। আর এতেই অশনি সংঙ্কেত দেখছেন মোদী-শাহ জুটি।