ক্লাব ছাড়ার ইঙ্গিত শুরুতে দিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল। চোটের কারণে প্রায়ই খেলতে পারছিলেন না, কোচ জিনেদিন জিদানের মূল একাদশে জায়গা হারিয়েছিলেন, চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে শুরুতে নামতে পারেননি বলে ক্ষোভ জানিয়েছিলেন ম্যাচের পরই—সব মিলিয়ে নিশ্চিত ছিল বিশ্বকাপের পর কেউ রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়লে, সেটা হবেন বেল।
তবে চিত্রটা উল্টোতে সময় লাগেনি। বিশ্বকাপের দুই সপ্তাহ আগে জিদানের হঠাৎ বিদায় আর বিশ্বকাপের শেষ দিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো জুভেন্টাসে পাড়ি দেওয়ার পর হঠাৎ দৃশ্যপট বদলে গেছে। কদিন আগেও বিদায়বার্তা বলার অপেক্ষায় থাকা বেলই এখন রিয়ালের মূল ভরসা। তাঁর কাধে এখন বিশাল দায়িত্ব। রোনালদোর রেখে যাওয়া বিশাল শূন্যস্থান পূরণ করার দায়িত্ব এখন বেলেরই।
জিদানের শেষ দিকে দলের সঙ্গে কোনোভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না বেল। ওয়েলস তারকার খেলার ধরনও ঠিক দলের ধরনের সঙ্গে যাচ্ছিল না। চোট থেকে ফেরার পরও মাঠের বাইরে অনেক সময় কাটাতে হয়েছে বেলকে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে বদলি নেমে তাঁর দুই গোলে টানা তৃতীয় শিরোপা জিতেছে রিয়াল। সেই জোড়া গোল তাঁর মাদ্রিদ ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বেলকে রিয়াল মাদ্রিদে আনাই হয়েছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার জন্য। সেটা তিনি করেছেন, পাঁচ বছরেই জিতেছেন চার চ্যাম্পিয়নস লিগ। কিন্তু বারবারই রোনালদোর সঙ্গী হয়ে, তাঁর ছায়ায় আড়াল হয়ে। এবার সময় নিজেই সে আলো কেড়ে নেওয়ার।
বিশ্বকাপের পরই দল ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল বেলের। কিন্তু জিদানের বদলে হুলেন লোপেতেগির আগমনে সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। নতুন গ্যালাকটিকো আনার অনেক সম্ভাবনা জাগলেও এখনো পর্যন্ত রিয়াল নতুন কাউকে দলে টানেনি। আর এলেও তাঁর মানিয়ে নিতে বেশ সময় লাগবে। সব মিলিয়ে রিয়ালের মূল তারকা এখন বেলই। যদিও বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা লুকা মদ্রিচের জনপ্রিয়তা এখন কিছুটা বেড়েছে। মদ্রিচের পরে সবচেয়ে বেশি জার্সি বিক্রির নামটা বেলেরই।
শুধু দলের অন্যান্য বিষয় নয়, কোচ লোপেতেগির আস্থার জায়গাটাও অর্জন করে নিয়েছেন বেল। লোপেতেগির প্ল্যান অনুযায়ী আক্রমণভাগে করিম বেনজেমার সঙ্গী হবেন ওয়েলস ফরোয়ার্ড। এ দুজনকে কেন্দ্র করেই আক্রমণের পরিকল্পনা লোপেতেগির। তবে বেলের মাদ্রিদ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে চোট। চোটের কারণে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ ম্যাচে মাঠেই নামতে পারেননি বেল। সেই চোটও সামাল দিয়েছেন ভালোভাবে। গত নভেম্বর থেকে আর চোটের সঙ্গে মন–কষাকষি তাঁর। রিয়ালের জন্য সুখবরই।
২৯ বছর বয়স্ক বেলের জন্য এই চ্যালেঞ্জটা শুধু নিজেকে প্রমাণ করার নয়, সময়ের সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করারও। গত পাঁচ বছর ধরে রিয়ালের মূল তারকা হয়ে খেলতে হয়নি তাকে। কিন্তু এবার সামনে চ্যালেঞ্জ নিজের নামের সঙ্গে ‘হান্ড্রেড মিলিয়ন ম্যান’ তকমাটাকে প্রমাণ করা।